সমলিঙ্গের বিয়েতে আইনি অনুমোদনের বিষয়ে কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারের মত জানতে চাইল দিল্লি হাই কোর্ট। দেশের আইনে এই বিষয়ে উল্লেখ না থাকায় নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগও জানাল আদালত।
বুধবার বিচারপতি রাজীব সহায় এন্ডলঅ এবং বিচারপতি আশা মেননের হাই কোর্ট বেঞ্চ কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারের উদ্দেশে নোটিশ পাঠিয়ে আগামী ৮ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে।
মামলার শুনানিতে এ দিন কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আইনজীবী রাজকুমার যাদব দাবি করেন, এই পরিস্থিতি ও অভিনব ঘটনা গত ৫,০০০ বছরের সনাতন ধর্মের ইতিহাসে পাওয়া যায়নি। জবাবে হাই কোর্টের বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দেয়, পুরনো ধ্যান-ধারণা ত্যাগ করার সময় হয়েছে।
বিচারপতি মেনন বলেন, ‘আমাদের পুরনো সংস্কার ত্যাগ করতে হতে পারে। আইন লিঙ্গ-নিরপেক্ষ। দয়া করে সনাতন ধর্মের নাগরিকদের জন্য আইনি যুক্তি বোঝার চেষ্টা করুন। এই মামলা বৈরিতামূলক নয়। এই মামলা দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সংক্রান্ত।’
আবেদনকারীর আইনজীবী মানেকা গুরুস্বামী আদালতকে জানান, কবিতা অরোরা (৪৭) ও অঙ্কিতা খান্না (৩৬) এবং বৈভব জৈন ও পরাগ বিজয় মেহতা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দুই সহকারী আইনজীবী সুরভি ধর ও অরুন্ধতী কাটজুকে নিয়ে আদালতকে গুরুস্বামী জানান, সমলিঙ্গভুক্ত হওয়ার কারণে দুই জোড়া যুগলের মধ্যে এক দম্পতিকে কালকাজি এলাকার এসডিএম ভবনে প্রবেশও করতে দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র তাঁদের আইনজীবীকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়।
শুধুতাই নয়, অনাবাসী যুগল বৈভব ও পরাগ আমেরিকায় ভারতীয় দূতাবাসে নিজেদের বিয়ে নথিভুক্ত করতে গেলেও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
আদালত আবেদনকারীদের আইনজীবীদের কাছে জানতে চায়, আবেদনে বিয়ের সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে কি না। বলা হয়, পরে এই নিয়ে প্রশ্ন না করে আর্জির গোড়াতেই তা করা দরকার। সেই সঙ্গে আদালত জানিয়েছেন, বিদেশি বিবাহ আইন এবং বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ের কোনও সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়নি। তবে আবেদনে বিয়ের সংজ্ঞার বিরোধিতা না করলে বিষয়টি নিয়ে এগোনো অসম্ভব বলেও মন্তব্য করে আদালত।
জবাবে গুরুস্বামী বলেন, উল্লিখিত দুটি আইনের মধ্যে তফাৎ হল, বিদেশি বিবাহ আইনে ভিনদেশের নাগরিকদের বিয়ে অনুমোদন করা হয়। তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে তাঁর মক্কেলরা সামাজিক আইন মোতাবেক আবেদন করেছেন, কোনও ধর্মীয় বিবাহ আইনের উল্লেখ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, দুটি আইনেই বলা হয়েছে যে মানসিক বিপর্যস্ত ব্যক্তি যাঁরা বিয়েতে নিজেদের মত দিতে বা অস্বীকার করতে অপারগ, শুধুমাত্র তাঁরাই আইন অনুযায়ী বিয়ে করতে পারেন না।
প্রসঙ্গত, এর আগে থেকেই প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অভিজিৎ আয়ার মিত্র ও আরও তিন আবেদনকারীর করাল এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলেছে দিল্লি হাই কোর্টে। গতসেপ্টেম্বর মাসে এই মামলার শুনানিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা মন্তব্য করেন, ভারতীয় ভাবধারা সমলিঙ্গের বিবাহকে স্বীকৃতি দেয় না।