দেশের নানা প্রান্তে মন্দির-মসজিদ বিতর্কের মাঝেই নয়া বিতর্ক। মঙ্গলবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশী অভিযোগ করেছিলেন, 'লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনার নির্দেশে' সংশ্লিষ্ট একটি প্যানেল রাজধানী শহরের একাধিক হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দির ভেঙে ফেলার নিদান জারি করেছে।
এবার তারই জবাব দিল লেফটেন্য়ান্ট গভর্নরের কার্যালয়। তাদের তরফ থেকে এই অভিযোগ একবাক্যে খারিজ করে দেওয়া হয়েছ। শুধু তাই নয়, গভর্নরের কার্যালয় দিল্লি মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগকে 'সস্তা রাজনীতি' বলেও তোপ দেগেছে।
এই ইস্যুতে সাক্সেনার সচিবালয়ের তরফ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনও মন্দির, মসজিদ, গির্জা বা অন্য কোনও প্রার্থনাস্থল ভেঙে ফেলা হয়নি। এবং এই সংক্রান্ত রিপোর্টও ফাইল করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, এই বিষয়টি নিয়ে লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। সেই চিঠিতে অতিশী দাবি করেন, তাঁর কাছে নির্দিষ্টভাবে একটি খবর এসেছি। তিনি জানতে পেরেছেন, গত ২২ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট 'ধর্মীয় কমিটি একটি বৈঠক করে এবং সেই বৈঠকেই রাজধানী দিল্লির একাধিক ধর্মীয় স্থান ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।'
চিঠিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী লেফটেন্য়ান্ট গভর্নরকে সম্বোধন করে সরাসরি লিখেছেন, 'আপনার নির্দেশে এবং আপনারই অনুমোদন সাপেক্ষে' সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় কমিটি দিল্লিজুড়ে একাধিক ধর্মীয় স্থান ভেঙে ফেলতে বলেছে।
এই চিঠির কড়া জবাব দিয়েছে লেফটেন্য়ান্ট গভর্নরের সচিবালয়। তাদের তরফে বলা হয়েছে, দিল্লির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আসলে অত্যন্ত 'সস্তা রাজনীতি' করছেন। কারণ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে অরবিন্দ কেজরিওয়েলর উত্তরসূরি হিসাবে তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। নিজের সেই 'ব্যর্থতা' আড়াল করতেই এমন সব অভিযোগ তুলছেন তিনি।
সচিবালয়ের তরফে পাঠানো জবাবি চিঠিতে বলা হয়েছে, 'লেফটেন্যান্ট গভর্নর পুলিশকে বলেছেন, তারা যাতে সেইসব অপশক্তির উপর কড়া নজরদারি রাখে, যারা স্রেফ রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ইচ্ছাকৃতভাবে ভাঙচুর চালাতে পারে। এই বিষয়েই কঠোর নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তাঁর সেই নির্দেশাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। যার ফলে আমরা দেখেছি, সদ্য ক্রিসমাস উদযাপনের কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।'
অতিশী তাঁর চিঠিতে অভিযোগ করেছিলেন, প্রার্থনাস্থলগুলি ভাঙার যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তাতে একাধিক হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরও রয়েছে। সেই তালিকায় যে উপাসনাস্থলগুলি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলি মূলত - প্য়াটেল নগর, দিলশাদ গার্ডেন, সুন্দর নগরি, সীমা পুরী, গোকুল পুরী এবং উসমানপুরে অবস্থিত।
অতিশী তাঁর পাঠানো চিঠিতে সাক্সেনা কাছে অনুরোধ করেন, যাতে তিনি উপসনাস্থলগুলি ভাঙার বিষয়টি আটকান। তা না হলে এই ঘটনাগুলি বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করতে পারে।
প্রসঙ্গত, আগে যে নিয়ম ছিল, সেই অনুসারে, ধর্মীয় কমিটির যাবতীয় সিদ্ধান্ত দিল্লি মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে লেফটেন্য়ান্ট গভর্নরের কাছে পৌঁছত। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, যত দিন এই ব্যবস্থা ছিল, তত দিন সমস্ত সম্প্রদায়ের ভাবাবেগের বিষয়টি মাথায় রেখেই পদক্ষেপ করা হত।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে এই বিষয়টি উল্লেখ করে লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে লেখেন, গতবছর গভর্নরের কার্যালয় থেকে একটি নোটিশ জারি করা হয়। তার মাধ্যমে দিল্লিতে ধর্মীয় নির্মাণ ভাঙা সংক্রান্ত বিষয়গুলি সরাসরি আপনার অধীনে পরিচালিত হবে বলে জানানো হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর থেকেই এই সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সমস্ত ফাইল স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে সরাসরি গভর্নরের কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলত, মুখ্যমন্ত্রীর অফিস কিছুই জানতে পারছে না।