গত মঙ্গলবার - অর্থাৎ - ৪ মার্চ (২০২৫) দিল্লি পুলিশের অপরাধদমন শাখা মাওবাদী সদস্য চম্পা হেমব্রম ওরফে রেণুকাকে গ্রেফতার করেছে। তিনি গোপনে রাজধানী দিল্লিতে বসবাস করছিলেন। সূত্রের খবর, চম্পা একজন উচ্চমানের প্রশিক্ষিত মাওবাদী। যিনি অতীতে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘর্ষেও জড়িত ছিলেন। দীর্ঘদিন লুকিয়ে থাকার পরও তাঁর অতীতই তাঁকে ধরিয়ে দিয়েছে। এবং তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, তিনি তাঁর কোম্পানি কমান্ডার জীবন কান্ডুলা-র সঙ্গে থেকে ঝাড়খণ্ড পুলিশের বিরুদ্ধে অন্তত তিনটি গুলির লড়াইয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
কৃষক পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক:
অপরাধদমন শাখা সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের কাছে গোপন সূত্রে খবর এসেছিল - ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলার কুদাবুরু গ্রামের ২৩ বছর বয়সী এক মাওবাদী সদস্য দিল্লিতে তাঁর পরিচয় গোপন করে বসবাস করছেন।
এই খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েই গত ৪ মার্চ পীতমপুরার মহারাণা প্রতাপ এনক্লেভে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, গ্রেফতার হওয়া ওই তরুণীর সঙ্গে একটি কৃষক পরিবারের সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর তিন ভাই এবং দুই বোন আছে।
চম্পা দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তাঁর গ্রামেরই একজন মাওবাদী তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং সংগঠনের সঙ্গে থাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বিনিময়ে তাঁকে ভালো খাবার, সুস্থ জীবন এবং নিরাপত্তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
আধুনিক অস্ত্র চালানোয় দক্ষ:
জেরায় চম্পা জানিয়েছেন, তাঁকে এসএলআর, ইনসাস, এলএমজি, হ্যান্ড গ্রেনেড এবং থ্রি নট থ্রি রাইফেল-সহ অন্যান্য আধুনিক অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। সংগঠনের বাকি সদস্যদের সঙ্গে তিনি যখন কোনও পদযাত্রা করতেন, সেই সময় কাঁধে করে ইনসাস রাইফেল বয়ে নিয়ে যেতেন।
২০১৮ সালে কোলহানে ঝাড়খণ্ড পুলিশের সঙ্গে হওয়া গুলির লড়াইয়ে তিনিও অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে পোরহাট এবং ২০২০ সালে সোনুয়াতেও তাঁর কোম্পানি কমান্ডার জীবন কান্ডুলার সঙ্গে একই ধরনের সংঘাত ঘটেছিল। সেই সময়েই তিনি তাঁর কোম্পানি কমান্ডারের নির্দেশে দিল্লি চলে আসেন।
পরিচারিকা হিসাবে কাজ:
২০২০ সালে দিল্লিতে পৌঁছে তিনি তাঁর আসল পরিচয় গোপন করে উত্তরপ্রদেশের নয়ডা এবং দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় গৃহস্থের অন্দরে পরিচারিকা হিসাবে কাজ শুরু করেন। পরে তিনি পীতমপুরা এলাকায় থাকতে শুরু করেন। সেখানেও তিনি তাঁর পরিচয় গোপন করে বসবাস করছিলেন।
সূত্রের দাবি, প্রায় চার বছর ধরে তিনি এভাবেই নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন। অনুমান করা হচ্ছে, 'স্লিপার সেল অপারেটিভ' হিসাবে কাজ করে তিনি একটি সাধারণ জীবনযাপন করছিলেন।
চম্পা ওরফে রেণুকার এই গ্রেফতারি মাওবাদীদের নিয়োগ নেটওয়ার্কের অনেক গোপন তথ্য সামনে নিয়ে আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাঁর জীবন কাহিনি থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে মাওবাদীরা তাঁদের সংগঠন মজবুত করার জন্য এবং নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির দরিদ্র ও অসহায় তরুণ-তরুণীদের শুধুমাত্র ভালোভাবে খাওয়া-পরার লোভ দেখিয়েই দলে টানেন। তারপর তাঁদের দিয়ে ভয়ঙ্কর সব অপরাধ করান।