বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লিতে হিংসায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৪। পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে রাম নাথ কোবিন্দের সঙ্গে কথা বললেন ইউপিএ সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী।
উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে লাগাতার দাঙ্গার জেরে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হিংসা রুখতে কোনও পদক্ষেপ করছে না দিল্লির আপ সরকার ও কেন্দ্র, অভিযোগ জানালেন ক্ষুব্ধ সনিয়া। তাঁর দাবি, দিল্লিতে আগুন জ্বললেও 'মূক দর্শক' হয়ে বসে রয়েছে কেন্দ্র ও আপ সরকার। পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা এবং রাজধানীতে শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপনের আবেদন নিয়ে এ দিন কংগ্রেস প্রতিনিধি দল নিয়ে রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেস সভাপতি।
রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমকে সনিয়া বলেন, 'গত চার দিন ধরে দিল্লিতে অশান্তির আগুন জ্বলছে, অথচ কোনও সক্রিয় পদক্ষেপ না করে মূক দর্শক হয়ে বসে রয়েছে কেন্দ্র ও আপ সরকার। এই মুহূর্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ করা উচিত।'
তিনি জানিয়েছেন, কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দিল্লি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য প্রচেষ্টার আশ্বাস দিয়েছেন কোবিন্দ।
দিল্লি হিংসায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত মোট ১০৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। সিসিটিভি দেখে বাকি দুষ্কৃতিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র এম এস রান্ধাওয়া।
পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বয়ং ময়দানে নেমেছেন জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল।এদিন তিনি নিজে দাঙ্গাপীড়িত মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। দ্রুত শান্তি ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। হাইকোর্টের নির্দেশের পর সংবেদনশীল অঞ্চল পরিদর্শন করতে গিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, টেগবাহাদুর হাসপাতালে মারা গিয়েছেন ৩০ জন। অন্যদিকে আরও দুই জন মারা গিয়েছেন জয়প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতালে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। এদিন শান্তির বার্তা দিয়ে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজে পরিস্থিতি তত্ত্বাবধান করছেন বলে টুইটারে জানান নরেন্দ্র মোদী। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ইস্তফার দাবি করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। দিল্লিতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।বিধানসভায় কেজরিওয়াল বলেন যে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। পুলিশ বলছে যে শীর্ষ নেতৃত্বের থেকে কোনও আদেশ নেই, তাই তারা কিছু করছে না, বলেও অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
দিল্লিতে হিংসা বন্ধ করার দাবিতে মঙ্গলবার গভীর রাতে কেজরিওয়ালের বাড়ি ঘেরাও করেন জামিয়ার বর্তমান পড়ুয়া ও প্রাক্তনীরা। পুলিশ তাঁদের সরাতে জলকামান ব্যবহার করে। প্রতিবাদীদের এরপর গ্রেফতার করে সিভিল লাইনস থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বুধবার সকালে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাওয়ের ডাক দেয় জামিয়া কো-অর্ডিনেশন কমিটি (জেসিসি) এবং অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন অফ জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া (এএজেএমআই)। ভোর ৩.৩০ নাগাদ ঘেরাও হঠাতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় প্রতিবাদীদের।
রাতেই জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশন ও মৌজপুর চওক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সিএএ বিরোধী প্রতিবাদ অবস্থান। ফাঁকা হয়ে যায় ফুটা রোড অঞ্চল। দিল্লির স্পেশ্যাল কমনিশনার সতীশ গোলচা এই খবর জানান।