ভারতে অনেকটা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের গ্রাফ অনেকটা কমেছে। তারইমধ্যে বিজ্ঞানীরা দাবি করলেন, আগামী দু'মাসের মধ্যে ডেল্টা (বি.১.৬১৭.২) প্রজাতির পরিবর্তন হতে পারে। আসতে পারে করোনার নয়া এক প্রজাতি।
সংবাদসংস্থা এএনআইতে সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজির (সিসিএমবি) উপদেষ্টা রাকেশ মিশ্র বলেন, ‘মনে হচ্ছে যে অধিকাংশ দেশের ৮০-৯০ শতাংশ করোনা আক্রান্তের মূলে আছে ডেল্টা প্রজাতি। কিন্তু দু'মাসের মধ্যে নয়া প্রজাতির (করোনাভাইরাসের) সঙ্গে সেটির (ডেল্টা প্রজাতি) পরিবর্তন হতে পারে। ব্রিটেনের কয়েকটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ডেল্টা পুষ্টি সংগ্রহ করছে। তার মানে এই নয় যে নয়া প্রজাতি আরও বেশি ভয়ংকর হবে।’
দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য ডেল্টা প্রজাতি দায়ী। সম্প্রতি ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এবং ইনস্টিটিউট অফ জিনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টেগ্রেটিভ বায়োলজির গবেষকদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ডেল্টা (বি.১.৬১৭.২) ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোখা আরও বেশি কঠিন। সেই করোনা প্রজাতির ফলে গুরুতর অসুস্থতার সম্ভাবনাও বেশি। এমনকী টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও আক্রান্তের সংখ্যার বাড়তে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
বিষয়টি নিয়ে ভেল্লোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক গগনদীপ কঙ্গ বলেছিলেনন, ‘ডেল্টা প্রজাতির ফলে যে গুরুতর রোগ হয়, তার বিরুদ্ধে কোভিশিল্ডের কার্যকারিতা নিয়ে আমাদের পর্যাপ্ত তথ্য নেই। কিন্তু পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই) এবং ক্রিক ইনস্টিটিউটের তথ্য আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে বলছে যে কোনও পরিবর্তনের দরকার কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমাদের নীতি এবং মডেল পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে।’
জুনের গোড়ার দিকে পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের (পিএইচই) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আলফা ভ্যারিয়েন্টের থেকে ভারতে প্রথম হদিশ পাওয়া ডেল্টার (বি.১.৬১৭.২) ক্ষেত্রে হাসপাতালে বেশি ভরতি হতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গত ২৭ মে পিএইচইয়ের তথ্য বিশ্লেষণ অনুযায়ী, অন্যান্য প্রজাতির নিরিখে ডেল্টার ক্ষেত্রে করোনা টিকার শুধুমাত্র প্রথম ডোজের কার্যকারিতা অনেকটা কম। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের তথ্য অনুযায়ী, ফাইজারের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর ৩৩.২ শতাংশ কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে। দ্বিতীয় ডোজের পর তা দাঁড়িয়েছে ৮৭.৯ শতাংশে। অন্যদিকে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকার (কোভিশিল্ড) ক্ষেত্রে প্রথম ডোজের কার্যকারিতা ৩২.৯ শতাংশ। যা দ্বিতীয় ডোজের পর দাঁড়িয়েছে ৫৯,৮ শতাংশে।
সেই বিষয়েই সপ্তাহদেড়েক আগেই নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে ল্যানসেট। গবেষণাগারে বিভিন্ন করোনা প্রজাতির বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতার পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা ফাইজার-বায়োএনটেক টিকার দুটি ডোজ পেয়েছেন, তাঁদের শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তা আলফা প্রজাতির থেকে ডেল্টাকে ৫.৮ গুণ কম রুখতে পারে। ডেল্টার মতো একইরকমভাবে টিকার কম কার্যকারিতা দেখা গিয়েছিল গামা প্রজাতির ক্ষেত্রেও। ল্যানসেটের গবেষকদের বক্তব্য, সেই তথ্য থেকে পরিষ্কার যে টিকার দুটি ডোজের মধ্যে ব্যবধান কম রাখতে হবে। অর্থাৎ বেশি সংখ্যক মানুষের টিকাকরণের জন্য দুটি ডোজের ব্যবধান বাড়িয়ে দিলে ডেল্টা প্রজাতির ক্ষেত্রে স্বল্পকালীন সময় টিকার কার্যকারিতা হ্রাস পায়।