কড়া ব্যবস্থা যে নেওয়া হবে, তা কিছুটা প্রত্যাশিত ছিলই। সেইমতোই রাজ্যসভায় হাঙ্গামার জন্য দুই তৃণমূল সাংসদ আট সাংসদকে এক সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ড করলেন চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু। ডেরেককে কক্ষ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
সোমবার অধিবেশনের শুরুতে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল, তা খারিজ করে দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। তিনি জানান, সংবিধানের ৯০ ধারার অধীনে সেই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। যে অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছিলেন তৃণমূল, কংগ্রেস, ডিএমকে, সিপিআই, আপ, এনসিপি, টিআরএস, জেডিএস, আরজেডি-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের সাংসদরা।
আরও পড়ুন : কী কারণে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংয়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল?
তারপর সরকারপক্ষের তরফে আট সাংসদকে সাসপেন্ড করার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। যাঁরা রবিবার রাজ্যসভার হাঙ্গমায় যুক্ত ছিলেন। ধ্বনিভোটে সেই প্রস্তাব পাশ হয়ে যায়। তারপর ওই আট সাংসদকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন - তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন ও দোলা সেন, আপের সঞ্জয় সিং, কংগ্রেসের রাজু সাতাব, সইদ নাজির হুসেন ও রিপুন বোরা এবং সিপিআইএমের কে কে রাগেশ ও ইলামারান করিম।
রবিবার রাজ্যসভায় দুটি কৃষি বিল পেশের সময় প্রাথমিকভাবে হই-হট্টগোল হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্র্ণে ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের (দুপুর একটা) পরও অধিবেশন চালিয়ে যাওয়া নিয়ে আপত্তি জানান বিরোধীরা। কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ জানান, সব দলের মত ছাড়া সেই অধিবেশনের সময় বাড়ানো যাবে না। তবে অধিবেশন চলতে থাকে। তা নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষে হাঙ্গামা শুরু হয়। ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশকে রুলবুক দেখান ডেরেক। প্রতিবাদের সময় চেয়ারম্যানের ডেস্কের মাইক্রোফোন ভেঙে ফেলেন কয়েকজন সাংসদ। ডেপুটি চেয়ারম্যানের কাছে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদের পাশাপাশি কাগজ ছিঁড়ে দেওয়ার দৃশ্যও ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
আরও পড়ুন : রবিবার রাজ্যসভায় কী হয়েছিল?
তা নিয়ে সোমবার রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। কয়েকজন সাংসদ ‘টেবিলের উপর নাচছিলেন’ মন্তব্য করে নাইডু বলেন, 'গতকাল রাজ্যসভার জন্য একটা বাজে দিন ছিল। কয়েকজন সদস্য ওয়েলে চলে আসেন। ডেপুটি চেয়ারম্যানকে শারীরিক নিগ্রহের হুমকি দেওয়া হয়। তাঁকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হয়েছিল। এটা দুর্ভাগ্যজনক এবং নিন্দনীয়।' তাঁর বক্তব্যের সময়ও ডেরেক-সহ বিরোধী সাংসদরা সরব হয়েছিলেন। ডেরেকের নাম নিয়ে তৃণমূল সাংসদকে কক্ষ ছেড়ে যেতে বলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান।
যদিও ওই সাংসদরা কক্ষ ছেড়ে যাননি। বরং নতুন করে প্রতিবাদ শুরু করেন। তা নিয়ে ভোট নেওয়ার দাবি জানান বিরোধী সাংসদরা। কিন্তু সেই দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। মার্শালদের ডেকে তাঁদের জোর করে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা আছে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের। কিন্তু সেই পথে হাঁটেননি তিনি। বরং স্থগিত করে দেওয়া হয় অধিবেশন।
কিছুক্ষণ পর আবার অধিবেশন শুরু হলেও আট সাংসদ কক্ষ ছেড়ে যাননি। সেই সময় আবার রাজ্যসভার সভাপতিত্ব করছিলেন হরিবংশ। বিষয়টি নিয়ে সরকারপক্ষের তরফে অভিযোগ করা হয়। তারপর আট সাংসদকে কক্ষ ছেড়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিতে থাকেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান। যদিও তাতে ভ্রূক্ষেপ করেননি তাঁরা। তারপর আবারও মুলতুবি হয়ে যায় অধিবেশন। অর্থাৎ দ্বিতীয় দফায় মাত্র ছ'মিনিট চলে অধিবেশন।