হ্রাস পাবে বায়ু দূষণ। কমবে দুর্ঘটনা। প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৮০ কিলোমিটার। এমনই অত্যাধুনিক রিজিওনাল র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম (আরআরটিএস) ট্রেনের প্রথম ছবি সামনে আনল কেন্দ্রীয় আবাসন এবং নগর বিষয়ক মন্ত্রক। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের আওতায় তৈরি সেই ট্রেন প্রাথমিকভাবে দিল্লি, গাজিয়াবাদ ও মীরাটের মধ্যে চলাচল করবে।
যে সংস্থা আরআরটিএস তৈরি করছে, সেই এনসিআর ট্রান্সপোর্টের (এনসিআরটিসি) তরফে জানানো হয়েছে, ২০২২ সালে প্রোটোটাইপ তৈরির কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া আছে। দিল্লি-মীরাটের মধ্যে সেই ৮২ কিলোমিটারের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৩০,৭২৪ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে গাজিয়াবাদের সাহিবাবাদ এবং দুহাইয়ের মধ্যে ১৭ কিলোমিটারের অংশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণকাজ চলছে। অগ্রাধিকারের অংশটি ২০২৩ সালে শুরু হবে এবং ২০২৫ সালে পুরো ৮২ কিলোমিটারই অতিক্রম করবে আরআরটিএস। ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে দৌড়ানোর জন্য নির্মিত হলেও ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটারে সেই ট্রেন চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে। ২৪ টি স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াবে।
এনসিআরটিসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিনয় কুমার সিং বলেন, ‘নয়া ভারতের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ভারতের প্রথম আরআরটিএসের নকশা তৈরি করা হয়েছে। সেটি শক্তি সাশ্রয় করবে, ব্রেকের সময় ৩০ শতাংশ শক্তি পুনরায় উৎপাদিত হবে।’ তিনি জানিয়েছেন, আরআরটিএসের রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত খরচও কম হবে।
দিল্লি, গাজিয়াবাদ ও মীরাট করিডরের সব ট্রেনই ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের আওতায় গুজরাতের বোম্বারডিয়ারের সাবলি প্ল্যান্টে তৈরি করা হবে। প্রাথমিকভাবে ৩০ টি ট্রেন তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে এনসিআরটিসি। প্রতিটি ট্রেনে ছ'টি কোচ থাকবে। তিন কোচ বিশিষ্ট ১০ টি ট্রেনেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যা মীরাটের লোকাল ট্রানজিট মডিউল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আধিকারিকদের দাবি, দেশের মধ্যে এই প্রথমবার ভারতে তৈরি অত্যাধুনিক ট্রেন দৌড়াবে। যে ট্রেনের বাইরের অংশ স্টিল দিয়ে তৈরি করা হবে এবং দিল্লির লোটাস টেম্পলের আদলে ট্রেনের ‘নাক’-এর নকশা করা হয়েছে।
বাতানুকূল, কম ওজনের সেই ট্রেনের দরজাও বড় রাখা হচ্ছে। প্রতিটি কোচে ছ'টি স্বয়ংস্ক্রিয় প্লাগ-ইন দরজা থাকবে। প্রতিটি দিকে তিনটি দরজা থাকবে। বিজনেস ক্লাসের ক্ষেত্রে দু'দিকে দু'টি করে মোট চারটি দরজা থাকবে। আর সেই ট্রেনের সব দরজা একইসঙ্গে খুলবে না। তার ফলে শক্তি সাশ্রয় হবে। এনসিআরটিসির প্রধান জনসংযোগ আধিকারিক সুধীর শর্মা বলেন, ‘ভিতরে এবং বাইরে একটি পুশ বাটন থাকবে। যার সাহায্যে যাত্রীরা দরজা খুলতে পারবে। নাহলে সব দরজা একসঙ্গে বাতানুকূল পরিবেশে খরচ বেশি হয়।’
পা ছড়ানোর পর্যাপ্ত জায়গা-সহ ২*২ বসার জায়গা থাকবে। হাতল থাকবে ও ধরার খুঁটি থাকবে। বিমানের মতো মাথার উপর জিনিসপত্র রাখার জায়গা থাকবে। বন্দোবস্ত থাকবে মোবাইল ও ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার সকেট। থাকবে ওয়াই-ফাইও।
আরআরটিএস নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী কেন্দ্রীয় আবাসন এবং নগর বিষয়ক মন্ত্রকের সচিব দুর্গাশংকের মিশ্র। তিনি জানান, সড়কপথে দিল্লি থেকে মীরাট যেতে আপাতত ঘণ্টা তিন-চারেক সময় লাগে। আরআরটিএস চালু হলে তা ৫৫ মিনিটে এসে ঠেকবে। আর এক্সপ্রেস পরিষেবায় সময় আরও কম লাগবে - ৩৫ মিনিট। একইসঙ্গে এনসিআর যানজট মুক্ত হবে এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপের নয়া দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
প্রথম দফায় মোট তিনটি করিডরে আরআরটিএস চলবে। দিল্লি-মীরাট ছাড়া দিল্লি-গুরুগ্রাম-এসএনবি এবং দিল্লি-পানিপথে বাকি দুটি করিডরের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, নির্মাণ শুরুর আগের যে কাজ আছে, তা দিল্লি-গুরুগ্রাম-এসএনবি করিডরে জোরকদমে চলছে। অনুমোদনের জন্য সেই করিডরের বিস্তারিত রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে কেন্দ্র। অন্যদিকে, দিল্লি-পানিপথ করিডরের জন্য হরিয়ানা ও দিল্লি সরকারের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।