কাশ্মীর প্রসঙ্গে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার প্রধানের সমালোচনার স্পষ্ট জবাব দিল ভারত। মঙ্গলবার নয়াদিল্লির তরফে জানানো হল, ভূস্বর্গে তৃণমূল স্তরে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে এবং আর্থিক উন্নয়ন গতি পেয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া সুরে জানানো হয়েছে, সেই প্রক্রিয়া ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করেছে ইসলামাবাদ। তা সত্ত্বেও উন্নয়নের গতি আটকানো যায়নি।
সোমবারের আপডেটে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট দাবি করেন, ‘নাগরিকদের উপর সামরিক ও পুলিশি হিংসার ঘটনা’ এবং সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে কাশ্মীরে। সংবিধান ও নয়া স্থায়ী বাসিন্দার (ডোমিসাইল) নিয়মের আইনি পরিবর্তনের ফলে ‘গভীর উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে’ বলে দাবি করেন তিনি।
সেই আপডেটের জবাবে মঙ্গলবার ভারতের স্থায়ী সদস্য ইন্দ্রমণি পান্ডে জানান, গত বছর অগস্টে জম্মু ও কাশ্মীরে পরিবর্তনের পর থেকে এলাকার মানুষজনও ‘ভারতের অন্যান্য প্রান্তের মতোই মৌলিক অধিকার ভোগ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তৃণমূল স্তরে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করতে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে নয়া গতি দিতে সক্ষম হয়েছি। কোভিড ১৯-এর প্রতিকূলতা এবং সেই প্রক্রিয়া বানচাল করার জন্য যেনতেন প্রকারেণ একটি দেশ জঙ্গি ঢোকানোর ক্রমাগত চেষ্টা সত্ত্বেও (আমরা তা করতে সক্ষম হয়েছি)।’
ভারতের তরফে কোনও দেশের নাম উল্লেখ না করা হলেও সেই দেশ যে পাকিস্তান, তা বুঝতে কোনও বাড়তি পরিশ্রমেরও দরকার পড়বে না। যে দেশকে জম্মু ও কাশ্মীরে সীমান্ত সন্ত্রাসের জন্য আবারও দায়ী করেছে নয়াদিল্লি।
ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি জানান, কাশ্মীরের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং আরও ভালো শাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সরকার যে চেষ্টা চালাচ্ছে, তা ‘অভূতপূর্ব ফল পেয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ইতিবাচক যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনের বিস্তার বাড়িয়ে এবং বৈষম্যমূলক বা সেকেলে আইন বাতিল করে, মহিলা, সংখ্যালঘু এবং শরণার্থী-সহ জম্মু ও কাশ্মীরের বঞ্চিত মানুষদের আর্থ-সামাজিক ন্যায়বিচার প্রদানের ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিজ্ঞা পালন করেছে সরকার।’
মঙ্গলবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফেও একই কথা জানানো হয়। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের প্রভাব নিয়ে এআইএমআইএম সাংসদ আসাউদ্দিন ওয়াইসির প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি দাবি করেন, ‘দেশের মূলস্তরের সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে অখণ্ড করে তুলেছে’ গত বছর ৫ অগস্টের (সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার) সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, ‘সেই পরিবর্তনের ফলে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ - দুটি নয়া কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। মানুষের ক্ষমতায়ন, অন্যায্য আইন বাতিল, যাঁরা দশকের পর দশক ধরে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, তাঁদের ন্যায়বিচার ও সুবিচার দেওয়া এবং সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে নিজেদের প্রাপ্য পাওয়ার মতো বিষয়গুলি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন (হয়েছে)। যা শান্তি ও উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের যাত্রার সূচনা হয়েছে।’
কেন্দ্র জানিয়েছে, ওই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রক নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ করে। তাছাড়াও বাড়তি হিসেবে চলতি অর্থবর্ষে ৩০,৭৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রেড্ডি বলেন, ‘পূর্বতন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের জন্য ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নমূলক প্যাকেজের আওতায় সড়ক, শক্তি, স্বাস্থ্য, পর্যটন, কৃষি, দক্ষতার বিকাশের মতো খাতে ৬৩ টি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের (জম্মু ও কাশ্মীরে ৫৪ টি এবং লাদাখে ন'টি) জন্য ৮০,০৬৮ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে।’
একইসঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের যুবপ্রজন্মকে বিভিন্ন কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, চলতি বছর ৩১ জুলাই পর্যন্ত ১৫,১৪২ জন প্রার্থীকে সেলস, হসপিটালি-সহ বিভিন্ন কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ৬,৭৬৩ জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং ৬,৫৫৬ জন কাজ পেয়েছেন।