বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অযোধ্যায় রাম মন্দির গড়তে সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দিচ্ছেন উত্তরাখণ্ডের ভক্তরা। তালিকায় যেমন আছেন এককোটি টাকা দানকারী হৃষিকেশের গুহাবাসী সাধু, তেমনই রয়েছেন চম্পাবতের ভিক্ষাজীবী, যিনি তাঁর গোটা দিনের সংগ্রহের অর্থ দান করেছেন মন্দির নির্মাণ তহবিলে।
গত বুধবার পরিষদের সংগ্রাহকদের বিস্মিত করে এককোটি টাকা দান করেছেন ৮৩ বছর বয়েসি গুহাবাসী সাধক স্বামী শংকর দাস। হৃষিকেশে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে চেক মারফৎ ওই অর্থ দান করেছেন বৃদ্ধ যোগী।
দীক্ষাগুরু তত্ত্বওয়ালে বাবার থেকে পাওয়া গুহাতেই বাস করেন স্বামীজি। ভক্তদের দক্ষিণার টাকাতেই তাঁর নিত্য খোরাকির সংস্থান হয়। যা উদ্বৃত্ত থাকে, তা জমিয়ে রাখেন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। ভিএইচপি-র আহ্বান শুনে সেই অর্থ তিনি তুলে দিয়েছেন পরিষদের হাতে।
এককোটি টাকার চেক জমা দিতে ব্যাঙ্কে পৌঁছলে প্রথমে বিশ্বাস করেননি আধিকারিকরা। পরে বৃদ্ধের অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখে তাঁরা ভিএইচপি চাঁদা সংগ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা ব্যাঙ্কে এসে স্বামীজিকে চাঁদার অর্থদানে সাহায্য করেন।
ভিএইচপি-র তরফে উত্তরাখণ্ডে রাম মন্দির নির্মাণে চাঁদার প্রচার প্রধান রণদীপ পোখরিয়া স্বামী শংকর দাসের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘অর্থ সংগ্রহের চেয়েও প্রচারের মূল লক্ষ্য ছিল রাম ভক্তদের মধ্যে ঐক্যবোধ ও সেবার মনোভাব তৈরি করা। এখনও পর্যন্ত আমরা প্রায় ৫ কোটি টাকা চাঁদা সংগ্রহ করতে পেরেছি, যা আমাদের প্রত্যাশার প্রায় তিন গুণ বেশি।’
গুহাবাসী সাধকের কোটি টাকা দানের পাশাপাশি রয়েছেন সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মানুষ, যাঁদের মধ্যেও মন্দির নির্মাণের প্রতি সমান আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, জানিয়েছেন পোখরিয়া। এমনই একজন চম্পাবতবাসী ভিক্ষাজীবী রাজকমল। পোখরিয়ার কথায়, ‘সম্প্রতি রাজকমল নামে চম্পাবতের এক ভিখারি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাঁদা দিয়েছেন। তিনি তাঁর একদিনের ভিক্ষার অর্থ ২৩০ টাকা তহবিলে দান করেছেন। এখানে দানের পরিমাণ বড় কথা নয়, কিন্তু প্রভু রামের প্রতি তাঁর অচল ভক্তিই আমাদের প্রচারকে সফল প্রমাণিত করেছে।’
পোখরিয়ার দাবি, ভিএইচপি সেবকদের রামজকমল বলেন, ‘নিজের জন্য সারাজীবন ভিক্ষা করেছি। কিন্তু আজ রাম মন্দির নির্মাণের জন্য একদিনের ভিক্ষা করা অর্থ তুলে দিতে পেরেছি। আমার জন্ম সার্থক হয়েছে।’
এমনই শর্তহীন ভক্তির বশে মন্দির নির্মাণের জন্য চাঁদা দিতে উৎসাহী হয়েছেন খতিমার বাসিন্দা ৯১ বছর বয়েসি পেনশনভোগী রামিচাঁদ। যেচে পরিষদের দফতরে যোগাযোগ করে পেনশনের থেকে ২৫,০০০ টাকা তিনি দান করেছেন মন্দির নির্মাণ তহবিলে।
ঈআবার গত শুক্রবার অযোধ্যায় রাম মন্দির গড়ার উদ্দেশে নিজের জমানো অর্থ ২,৫০০ টাকা দান করেছে নৈনিতালের বছর দশেকের একটি মেয়ে, জানিয়েছেন পোখরিয়া।
অযোধ্যায় রামজন্মভূমিতে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য চাঁদা সংগ্রহের উদ্দেশে ২৪ লাখ পরিবারের কাছে পৌঁছবে বলে প্রথমে জানিয়েছিল ভিএইচপি। এই জন্য ১৪,৫২৬টি গ্রাম এবং ৭৩টি শহরে প্রচার অভিযান চালায় এই হিন্দু সংগঠন। সংগৃহীত চাঁদা সংগ্রহ ও তার হিসাব রাখার জন্য একাধিক কমিটি গড়েছে পরিষদ। এই ব্যবস্থায় প্রান্তিক কোনও গ্রাম থেকে সংগ্রহ করা চাঁদার অর্থ মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যাঙ্কে ভিএইচপি-র অ্যাকাউন্ট জমা পড়ছে।
মন্দির নির্মাণের জন্য চাঁদা তুলতে ১০, ১০০, ১,০০০ ও ২,০০০ টাকার কুপন ছেপেছে সংগঠন। দুই হাজার টাকার বেশি কেউ চাঁদা দিতে চাইলে তাঁকে ওই অর্থের রশিদও কেটে দিচ্ছে পরিষদ।