'শুনতে খুব খারাপ লাগে' এবং তিনি 'এই শব্দটি পছন্দ করেন না', তাই ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও সংবাদমাধ্যম যেন আর 'ধর্ষণ' শব্দটি ব্যবহার না করে! বদলে 'নারী নির্যাতন', 'নারী নিপীড়ন'-এর মতো শব্দগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে! শনিবার (১৫ মার্চ, ২০২৫) আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে এমনই নিদান দিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)-এর কমিশনার শেখ মহম্মদ সাজ্জাত আলি।
বাংলাদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে - সাজ্জাত সাহেবের বক্তব্য হল, এটি শুধুই তাঁর 'অনুরোধ'! কিন্তু, কোনও নারীকে যদি ধর্ষণ করা হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা নারী নির্যাতন বা নারী নিপীড়নের মধ্যে পড়ে। কিন্তু, তা বলে কি সব ধরনের নারী নির্যাতনই ধর্ষণ? নয় তো। যেমন - কোনও নারীকে যদি শ্লীলতাহানি করা হয়, মারধর করা হয়, গালাগালাজ করা হয়, যদি তাঁর সঙ্গে কোনও ধরনের লিঙ্গবৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় - তাহলে সেগুলি সবই তো নারী নির্যাতন বা নিপীড়নের মধ্যে পড়ে।
বস্তুত, ধর্ষণ হল - নারী নির্যাতনের এক নিকৃষ্টতম ও পৈশাচিক নিদর্শন। তাহলে তাকে কেবলমাত্র 'নারী নির্যাতন' বা 'নারী নিপীড়ন' বলা হবে কেন? এমনকী, 'যৌন নির্যাতন' শব্দবন্ধও ব্যবহার করা যাবে, এমন কোনও কথা কমিশনার বলেছেন বলে শোনা যায়নি।
সমস্যা আরও আছে। ধর্ষণ যে শুধুমাত্র নারীর সঙ্গে হয়, এমনটাও তো নয়। পুরুষও তো একই অপরাধের শিকার হতে পারে। তেমন ঘটনা ঘটলে কী লেখা হবে? বা কী লিখতে হবে? এমন কোনও প্রশ্ন বা উত্তর অবশ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনগুলিতে পাওয়া যায়নি।
এটা ঠিক যে নাবালক ও নাবালিকাদের ক্ষেত্রে নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে সেখানে 'ধর্ষণ' শব্দটি অনেক সময়েই উল্লেখ করা হয় না। কিন্তু, 'যৌন নির্যাতন' অবশ্যই উল্লেখ করা হয়। তা না হলে যদি শুধুই 'শিশু নির্যাতন' শব্দবন্ধ ব্যবহর করা হয়, তাহলে তো অপরাধের গুরুত্বই অনেকটা কমে যায়।
তাহলে, হাসিনা সরকারের পতনের পর যেভাবে বাংলাদেশে ধর্ষণ-সহ সমস্ত ধরনের নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে, এবং সম্প্রতি যেভাবে নাগরিক সমাজ এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে, পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্ন উঠছে, তার জেরেই কি সংবাদমাধ্যমে আর 'ধর্ষণ' শব্দটি শুনতে বা দেখতে চাইছেন না ঢাকার পুলিশ কমিশনার? যদিও তাঁর দাবি, সেদেশের সংবিধানেও নাকি শুধুমাত্র 'নির্যাতন' শব্দটিই রয়েছে।
এদিন ঢাকার কাজি নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের ডেইলি স্টার ভবনে 'হেল্প' নামে একটি মোবাইল অ্য়াপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, 'আমি দু'টি শব্দ খুব অপছন্দ করি, এর মধ্যে একটি হল ধর্ষণ। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা ব্যবহার করবেন না। আপনারা নারী নির্যাতন বা নিপীড়ন বলবেন। আমাদের আইনেও নারী ও শিশু নির্যাতন বলা হয়েছে। যে শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে, সেগুলো আমরা (যেন) না বলি।'
মূলত, সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে এই মন্তব্য করেন কমিশনার। প্রসঙ্গত, 'হেল্প' নামক মোবাইল অ্যাপটি নারী নিরাপত্তার উদ্দেশ্যেে চালু করা হয়েছে।