শিশির গুপ্ত
আলোচনার মতোই হচ্ছে প্যাংগং সো লেক থেকে সরে যাচ্ছে ভারতীয় এবং চিনা সেনা। উপগ্রহ চিত্রেও লবণাক্ত জলের লেকের উত্তর তীরে ফিঙ্গার ৮-এর শৃঙ্গের দিকে লাগাতার চিনের ভারী গাড়ির সরে যাওয়ার বিষয়টি ধরা পড়েছে। যে প্রক্রিয়া আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারির (শুক্রবার) মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
দু'দেশের শীর্ষস্তরের আলোচনার পর গত বুধবার থেকে প্যাংগং সো থেকে সরে যাচ্ছে ভারত এবং চিন। সেই পিছু হটে যাওয়ার প্রক্রিয়া ১০ দিনের মধ্যেই মিটে যাবে বলে ধরা হয়েছে। তারইমধ্যে শুক্রবার পুরো প্রক্রিয়ার মূল্যায়ন করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। আপাতত যেভাবে দু'দেশই পিছিয়ে যাচ্ছে, তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভারতীয় সেনার উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও। এক কর্তা বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি যে সেই লক্ষ্যের দিকে (পিছু হটে যাওয়া) ভালোভাবেই এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সূচি মেনেই অত্যন্ত দ্রুত সরে যাচ্ছে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)।’
এমনিতে গত বছর এপ্রিল যেখানে ছিল দু'দেশের সেনা, তত পর্যন্ত পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে ভারত এবং চিন। অর্থাৎ উত্তর তীরে ফিঙ্গার ৩-এর ঘাঁটিতে সরে আসবে ভারতীয় সেনা। আর ফিঙ্গার ৮-এর পূর্বে স্রিজাপ সেক্টরে ফিরে যাবে পিএলএ। একইভাবে দক্ষিণ তীরে ভারতীয় এবং চিনা সেনা যথাক্রমে চুশুল এবং মলডোতে ফিরে যাবে। ফিঙ্গার ৪ থেকে ফিঙ্গার ৮ থেকে পুরোপুরি সামরিক বাহিনী তুলে দেওয়া হবে। পরে দু'দেশের কমান্ডারদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে সেখানে টহলদারির সূচি নির্ধারণ করা হবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, লাদাখ সেক্টরে ১,৫৯৭ কিলোমিটারের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর শান্তি এবং সুস্থিতি নিশ্চিত করতে প্যাংগং সো লেক থেকে সেনা সরানোর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে গোগরা-হট স্প্রিং এবং ডেপস্যাং মালভূমি নিয়েও আলোচনায় বসবে দু'দেশ। ভারতীয় সেনার আধিকারিকদের মতে, ভবিষ্যতে সামরিক টানাপোড়েন এড়াতে পুরো ৩,৪৮৮ কিলোমিটার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবরই পিছিয়ে যেতে হবে দু'দেশকে। ভারতীয় সেনার এক শীর্ষ কমান্ডার বলেন, ‘পুরোটার জন্য একমাত্র উপায় হল পিছিয়ে যাওয়া। তবে শান্তি এবং সুস্থিতি এখনও দূরে আছে।’
আপাতত প্যাংগং সো'র দক্ষিণ তীর থেকে চিনের মূল যুদ্ধ ট্যাঙ্কের পাশাপাশি ভারতের সমরাস্ত্র সরিয়ে নেওয়ার স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। তবে আরও ভিতরের দিকে এলাকা বা মধ্য বা পূর্ব সেক্টর থেকে চিনা বাহিনী বা সমরাস্ত্র পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার এখনও কোনও প্রমাণ মেলেনি। প্রতিদিনই উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়ার উপর নজর রাখা হচ্ছে। তারইমধ্যে আগামী মার্চ থেকে জুনের মধ্যে তিব্বত এবং শিনজিয়াংয়ে সামরিক মহড়ার সময় চিনা সেনা ওয়ের্স্টান থিয়েটার কমান্ডারের দিকে নজর থাকবে ভারতীয় সেনার। সেটাই ভারতের কাছে বেশি উদ্বেগের। এমনিতেই শিয়াদুল্লাহতে কারাকোরাম পাসে নিজেদের অবস্থান থেকে নড়েনি। দৌলত বেগ ওল্ডিতেও একই অবস্থান নিয়েছে চিনা সেনা। সেই কারণেই চিনা সেনার পদক্ষেপ যাচাই করেই বিশ্বাস করার কৌশন নিয়েছে নয়াদিল্লি। যাতে স্থানীয় চিনা সেনার কমান্ডারদের কারণে নতুন করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত না হয়ে ওঠে।