ওয়াকফ বিল নিয়ে আলোচনার সময় বেনজির ঘটনা ঘটে সংসদে। ওয়াকফ বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বিজেপি সাংসদ অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুমুল তর্কাতর্কি হওয়ার জেরে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, টেবিলে থাকা কাচের জলের বোতল জোর ঠুকে রাখেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তখনই তা ভেঙে আহত হন শ্রীরামপুরের সাংসদ। এই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কড়া সমালোচনা করেন ওয়াকফ কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল। আর এই কাজটিকেই অনৈতিক বলে পাল্টা খোঁচা দিলেন ডিএমকে সাংসদ এ রাজা।
এই ঘটনা নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে জাতীয় রাজনীতির অলিন্দ। এই কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপির সাংসদ জগদম্বিকা পাল নিরপেক্ষ ছিলেন না বলেই অভিযোগ করেছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই সেই রাগ উগরে দিতে গিয়েই কল্যাণবাবু আহত হন। যদিও জগদম্বিকা পাল বলেন, ‘আমার ৪০ বছরের সংসদীয় জীবনে আমি নানা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম। তখনও নানা মতপার্থক্য হয়েছে। কিন্তু আজকে কী ঘটল! আমরা কখনও কল্পনাই করতে পারি না এমন ঘটনা ঘটতে পারে।’ কমিটির বৈঠকের অন্দরে কি ঘটেছে সেটা বাইরে নিয়ে আসাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন ডিএমকে সাংসদ এ রাজা। যদিও তা মানতে নারাজ জগদম্বিকা পাল।
আরও পড়ুন: ‘গণতন্ত্রে হিংসার কোনও জায়গা নেই’, কড়া সমালোচনা করলেন জগদম্বিকা, পাল্টা কল্যাণও
এই ঘটনার জেরে ওয়াকফ কমিটি থেকেই সম্পূর্ণ সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কল্যাণবাবুকে। কিন্তু প্রবল আপত্তি করেন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সদস্যরা। তখন একদিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। বিরোধীরাদের বক্তব্য ছিল, ওয়াকফ বিল সংবিধানের পরিপন্থী। তার ফলে একদিকে যেমন মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবে তেমনই সেটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষেও ভাল নয়। এই গোটা ঘটনা নিয়ে এ রাজা আজ বুধবার কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে ওয়াকফ (সংশোধন) বিল ২০২৪ জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির চেয়ারম্যান একটি সাংবাদিক বৈঠক করেছেন এবং বৈঠকে যাই হোক না কেন তা বর্ণনা করেছেন। যদিও তিনি সম্পূর্ণরূপে জানেন যে কার্যপ্রণালী গোপনীয় এবং প্রকাশ করা যায় না।’
কিন্তু অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বচসা জড়িয়ে পড়েন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ এই ওয়াকফ বিল নিয়ে দু’পক্ষের মতবিরোধ ঘটে। তারপর যা ঘটেছে কা নিয়ে কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল বলেন, ‘এটা গণতন্ত্রের উপর আঘাত। আমি বিষয়টি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে জানিয়েছি। এটা সবচেয়ে বড় ঘটনা যা সংসদে প্রথম ঘটল। গণতন্ত্রে হিংসার কোনও জায়গা নেই। আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে নালিশ করতে পারতেন। আমি ইস্তফা দিতে তৈরি।’ পাল্টা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘অসত্যের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি থাকবে।’ এ রাজার অভিযোগের প্রেক্ষিতে জগদম্বিকা পালের সাফাই, ‘আমি কমিটির কোনও কার্যক্রম বা আলোচনা প্রকাশ করিনি। কমিটির বৈঠকে একজন সদস্যের হিংসার ঘটনা এবং পরবর্তীতে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়ে আমি শুধু একটি বিবৃতি দিয়েছি।’