ফরেনসিক বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে ৫০০ বছরের প্রাচীন এক রহস্যের কিনারা করা সম্ভব হল। স্পেনের ক্যাথিড্রাল অফ সেভিলে মানব দেহের যে অবশেষ পাওয়া গিয়েছিল, তা যে প্রখ্যাত ভূ-পর্যটক তথা আবিষ্কারক ক্রিস্টোফার কলম্বাসেরই দেহাবশেষ, তা নিয়ে আর কোনও সংশয় রইল না।
দ্য ডেইলি এক্সপ্রেসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এই রহস্যের কিনারা করতে প্রায় ২০ বছর ধরে গবেষণা চালানো হয়েছে। ফরেনসিক বিজ্ঞানীরা ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন, ওই দেহাবশেষ ক্রিস্টোফার কলম্বাস ছাড়া আর কারও হতে পারে না।
ইতিহাস বলছে, ১৫০৬ খ্রিস্টাব্দে প্রয়াত হন মহান অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাস। যদিও তাঁর দেহাবশেষের অন্তিম অবস্থান নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে নানা বিতর্ক ছিল। কিন্তু, এবার আধুনিক বিজ্ঞান কলম্বাসকে নিয়ে চলে আসা এই রহস্যের নিখুঁত কিনারা করে দিল।
ফরেনসিক বিজ্ঞানীরা ক্রিস্টোফার কলম্বাসের উত্তরাধিকারী এবং তাঁর আত্মীয়দের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যদের দেহ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন। তারপর সেই নমুনাগুলি স্পেনের ওই ক্যাথিড্রালে রাখা দেহাবশেষ থেকে সংগৃহীত ডিএনএ নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। তাতেই মেলে সাফল্য। দেখা যায়, প্রাচীন ওই নমুনার সঙ্গে এখনকার নমুনাগুলি সম্পূর্ণ ১০০ শতাংশ মিলে গিয়েছে। যাকে বিজ্ঞানীরা বলছে, 'পারফেক্ট ম্যাচ'।
আসলে কলম্বাসকে ঠিক কোন জায়গায় সমাধিস্থ করা হয়েছিল, তা নিয়ে এত দিন ইতিহাসবিদদের মধ্যে নানা তর্ক-বিতর্ক চলেছে। তার কারণ হল, মৃত্যুর পর কলম্বাসের দেহ বারবার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই কারণেই সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এত দিনে যার সমাধান করা সম্ভব হল।
সংশ্লিষ্ট ফরেনসিক বিজ্ঞানীদের দলের নেতৃত্বে ছিলেন মিগুয়েল লোরেনতে। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, 'আজ, নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে এই রহস্যের কিনারা করা সম্ভব হয়েছে। এত দিন শুধুমাত্র একটা ধারণা করা হত যে স্পেনের ক্যাথিড্রাল অফ সেভিলে যে দেহাবশেষ রয়েছে, তা ক্রিস্টোফার কলম্বাসের। এবার সেটাই প্রমাণিত হয়ে গেল।'
স্পেনের ক্যাথিড্রাল অফ সেভিলে যে সমাধিটি রয়েছে, তাকে ঘিরে ঐতিহাসিক ও গবেষকদের আগ্রহ চিরকালের। তাঁদের অধিকাংশেরই বিশ্বাস ছিল, ওই সমাধির নীচে শতাব্দী প্রাচীন যে দেহাবশেষটি তার অন্তিম শয্যায় শায়িত রয়েছে, তা ক্রিস্টোফার কলম্বাসেরই।
কিন্তু, ২০০৩ সালের আগে পর্যন্ত এই ধারণাকে বিজ্ঞানের প্রামাণ্য ভিত্তিতে দাঁড় করানোর কোনও উপায় ছিল না। শেষমেশ ২০০৩ সালে মিগুয়েল ও তাঁর সহকর্মীরা ওই সমাধি খুলে সংশ্লিষ্ট দেহাবশেষটি থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে সমর্থ হন এবং তারপরই শুরু হয় এক সুদীর্ঘ গবেষণার কাজ।
কারণ, সেই সময়েও ডিএনএ প্রযুক্তি আজকের মতো উন্নত ছিল না। ফলে গবেষক ও বিজ্ঞানীদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
উল্লেখ্য, স্পেনের এই ক্যাথিড্রালেই রয়েছে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের ভাই দিয়েগো এবং ছেলে হেরানদোর সমাধি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে বিজ্ঞানীরা সেগুলি থেকেও নমুনা সংগ্রহ করেন, এবং তা বাকি সমস্ত নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই 'পারফেক্ট ম্য়াচ' পেয়েছেন তাঁরা।
এই দীর্ঘ গবেষণা প্রসঙ্গে আমজনতাকে অবহিত করতে স্পেনের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে, 'কলম্বাস ডিএনএ: দ্য জেনুইন ওরিজিন'।