রবিবার গাড়ি দুর্ঘটনায় গত হন টাটা সনসের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রি। পুলিশি তদন্তে জানা যায়, সাইরাস মিস্ত্রি গাড়ির পিছনের সিটে ছিলেন। সিটবেল্ট পরে ছিলেন না। তাঁর বিলাসবহুল মার্সিডিজের পিছনের অংশটি কার্যত অক্ষতই ছিল। কিন্তু সিটবেল্ট না পরায় গুরুতরভাবে জখম হন সাইরাস মিস্ত্রি। আর তার পরেই গাড়ির পিছনের সিটে সিটবেল্ট পরার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সত্যিই তো, পুলিশকর্মী, বিশেষজ্ঞরা প্রায়শই গাড়ির পিছনের সিটেও সিটবেল্ট পরার কথা বলেন। কিন্তু আদতে আমরা ক'জন তা মেনে চলি?
শিল্পপতির মর্মান্তিক প্রয়াণের পর, এই বিষয়ে মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গডকড়ি। সোমবার তিনি বলেন, 'লোকে ভাবেন পিছনের সিটে বেল্ট লাগে না। এটাই সমস্যা। আমি এই দুর্ঘটনাটি নিয়ে কোনও মন্তব্য করছি না। কিন্তু আমাদের এটা বোঝা দরকার যে, সামনের সিটের মতোই, পেিনের সিটে বসলেও সিটবেল্ট পরা উচিত।'
নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বললেন, 'সাধারণ মানুষের কথা ছেড়েই দিন। আমি চারজন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িতে চড়েছি, নাম জিজ্ঞেস করবেন না। আমি গিয়ে সামনের সিটে বসলাম। দেখলাম, একটি ক্লিপ এমনভাবে লাগানো, যাতে বেল্ট না পরলেও কোনও শব্দ না হয়। আমি তবুও চালককে বেল্ট কোথায় তা জিজ্ঞেস করে পরে নিয়েছিলাম।'
আসলে, গাড়িতে সামনের সিটবেল্টের সঙ্গে একটি সেন্সর যুক্ত থাকে। যতক্ষণ না সিটবেল্ট পরা হচ্ছে, গাড়িতে একটি অ্যালার্টের আওয়াজ হয়। এদিকে তাতেই বিরক্ত হন চালক ও যাত্রীরা। তাই সিটবেল্ট পরা(ও এই আওয়াজ) এড়াতে বাজারে বিশেষ ধরণের ক্লিপ পাওয়া যায়। সেটা লাগিয়ে দিলেই সেন্সর বন্ধ হয়ে যায়।
নিজের অভিজ্ঞতার পরেই এমন ক্লিপের বিক্রি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছেন গড়কড়ি। চলছে সেই প্রক্রিয়া।
সেটা না হয় হল। কিন্তু এভাবে সিটবেল্ট পরা নিয়ে আমজনতার যে 'অ্যালার্জি' সেটা দূর হবে কীভাবে? গডকড়ির মতে, এর জন্য বলিউড তারকা, ক্রিকেট খেলোয়ার এবং সংবাদমাধ্যমের দ্বারা প্রচার চালানো যেতে পারে। সচেতনতা বাড়াতে হবে সাধারণ মানুষের।
কিন্তু সিটবেল্ট পরা নিয়ে এত অনীহা কেন? সত্যি বলতে, ব্যাপারটা অনেকটা মোটরসাইকেল চালানোর সময়ে হেলমেট পরতে না চাওয়ার মতোই। হাওড়ার এক অ্যাপ ক্যাব মালিক জানালেন, অনেকে সামনে বসেও সিট বেল্ট পরতে চান না। পেটে লাগবে বা, জামার ইস্ত্রি খারাপ হওয়ার কথা বলেন। ট্রাফিক পুলিশের চালানের কথা জানালে তাঁরা পিছনের সিটে গিয়ে বসেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে বহরমপুরে দলীয় কর্মিসভা থেকে ফেরার পথে এক পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকা এক দুধের ভ্যানে ধাক্কা মারে তাঁর স্করপিও। সেক্ষেত্রে গুরুতর আহত হলেও প্রাণরক্ষা হয় অভিষেকের। সেক্ষেত্রেও সিটবেল্ট পরা ও এয়ারব্যাগ থাকার গুরুত্ব উঠে আসে। তবে এত কিছুর পরেও সেভাবে টনক নড়েনি আমজনতার।
ভারতে প্রতি বছর প্রায় ৫ লক্ষ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। নিহতদের ৬৫%-ই ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী।