মাত্র চার ফিট দূরে ওঁৎ পেতে আছে সাক্ষাৎ মৃত্যু। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেলেও মিলছে না সাহায্য। এ হেন চরম বিপদের মুখে পড়েও সাহস হারায়নি বল্লু। আর সেই দুর্জয় সাহসই তাকে নেড়ি সমাজ তো বটেই, গোটা গ্রামেই রাতারাতি বীরের সম্মান দিয়েছে।
কর্নাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলার কোমবারু অভয়ারণ্য লাগোয়া একচিলতে গ্রাম বিলিনেলে। মঙ্গলবার নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এক আত্মীয়ের বাড়ি যান গ্রামের প্রৌঢ়া বাসিন্দা বিজয়লক্ষ্মী। বাড়ি ফেরেন গভীর রাতে।
এ দিকে সন্ধ্যায় লাগোয়া জঙ্গল থেকে গ্রামে ঢুকে পড়ে স্থানীয় কুকুর বল্লুকে তাড়া করে একটি চিতাবাঘ। প্রাণ বাঁচাতে বল্লু বিজয়লক্ষ্মীর বাড়ির শৌচাগারে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তার পিছু পিছু সেখানে সটান ঢুকে পড়ে চিতাবাঘও।
চার ফিট বাই তিন ফিটের সেই ছোট্ট ঘরে মুখোমুখি হয় খাদ্য ও খাদক। কিন্তু চার দেওয়ালের মাঝে আটকে পড়ে ঘাবড়ে যায় চিতাবাঘটি। শিকার ভুলে সে শৌচাগার থেকে বেরোনোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। শৌচাগারের এক দেওয়ালে গুটিশুটি মেরে পড়ে থাকে শ্বাপদ, আর উলটো দেওয়ালে পিঠ দিয়ে নিজের অবস্থানে অনড় থাকে বল্লুও।
এর মধ্যে ভোররাতে শৌচাগারে ঢুকতে গিয়ে বন্ধ দরজার বাইরে চিতাবাঘের মোটা লেজ দেখতে পান বিজয়লক্ষ্মী। চেঁচামেচি না করে চুপিসাড়ে বাইরে থেকে দরজায় শিকলতুলে দিয়ে তিনি ছোটেন বন দফতরে খবর দিতে।
এ দিকে ভোর থেকে সকাল, এরপর বেলা গড়িয়ে দুপুর পর্যন্ত সাক্ষাৎ শমনের মুখোমুখি হয়েও সাহসে এতটুকু চিড় ধরে না বল্লুর। বীর বিক্রমে নিজের এলাকা রক্ষা করে যায় কুকুরটি। ও দিকে চিতাবাঘ আটকে পড়ার খবর পেয়ে বিজয়লক্ষ্মীর বাড়িতে ভিড় জমান গ্রামবাসীরা। শৌচাগারের জানলা দিয়ে মোবাইল ফোনে অনেকে ছবিও তোলার চেষ্টা করেন। গোলমাল শুনে ঘাবড়ে গিয়ে জানলা তাক করে লাফ দেয় বিরক্ত চিতাবাঘটি। তবে গরাদ ভেদ করে কাউকে আঘাত করতে সে পারেনি। এত গোলমালের মধ্যেও কিন্তু নিজের জায়গায় চুপচাপ বসে থাকে বল্লু।
দুপুরে বন দফতরের আধিকারিকরা দলবল নিয়ে পৌঁছে শৌচাগারের ফাইবার গ্লাসের ছাউনির উপরে বাঘ ধরার জাল বিছিয়ে দেন। কিন্তু পলকা ছাউনির ক্ষমতা ছিল না প্রায় ১০০ কেজি ওজনের চিতাবাঘকে সামলানোর। শেষ পর্যন্ত সেই ছাউনি থাবার জোরে ফাটিয়েই বন দফতরের পাতা জাল এড়িয়ে জঙ্গলে পালায় চিতাবাঘটি।
দরজা খুলে দিলে হেলেদুলে শৌচাগার থেকে বেরিয়ে আসে বল্লুও। বাঘের মুখে দাঁড়িয়ে তার অনমনীয় স্নায়ুযুদ্ধের তারিফে পঞ্চমুখ গ্রামের বাসিন্দারা। পাড়ার নেড়ি কুকুররা ইদানীং তাকে যথেষ্ট সমীহ করে চলেছে বলেও জানা গিয়েছে।
কোমবারু অভয়ারণ্যের সুব্রহ্মনিয়ম রেঞ্জের আরএফও এইচ টি রাঘবেন্দ্র জানিয়েছেন, ‘গ্রামের কেউ ঘটনায় আহত হননি। চিতাবাঘটির বয়স পাঁচ বছরের কম আর তার ওজন ৮০-১০০ কেজি।’