পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ঘনিষ্ঠতা ফের একবার প্রতিফলিত হল গাজা শান্তি সম্মেলনের মঞ্চে। সেই মঞ্চে বক্তব্য রাখার সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের প্রশংসা করতেও দেখা গেল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। মুনিরকে নিজের 'ফেভারিট' বলে আখ্যা দেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, পাকিস্তানি সেনাপ্রধান সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। তা সত্ত্বেও শেহবাজ শরিফকে পোডিয়ামে ডাকার আগে মুনিরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন ট্রাম্প।
বক্তব্য রাখার জন্য শরিফকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং আমি অবশ্যই বলতে পারি যে পাকিস্তান থেকে আমার প্রিয় হলেন ফিল্ড মার্শাল... তিনি এখানে নেই, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এখানে আছেন।' বিশেষ ব্যাপার হলো, সম্প্রতি হোয়াইট হাউজে শরিফ ও মুনিরের সঙ্গে দেখা করেন ট্রাম্প। সেই সময়েও পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের প্রশংসা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এদিকে ভারত ও পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতির জন্য বহুবার নিজেই নিজেকে কৃতিত্ব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজার শান্তি চুক্তি মঞ্চেও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। মিশরে অনুষ্ঠিত গাজা শান্তি সম্মেলনে ফের একবার নিজের 'প্রশংসা' করতে শোনা যায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে। সেই সময় ভারত-পাক সংঘাত থামানোর বিষয়টি উত্থাপন করেন তিনি। এবং একাধিক রাষ্ট্রনেতার সামনেই ট্রাম্প বলেন, 'আমি আশা করি এরপর ভারত এবং পাকিস্তান সুন্দর ভাবে একসঙ্গে থাকবে।' এই কথা বলেই পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের দিকে তাকান ট্রাম্প। তখন শরিফ ঝুঁকে পড়ে হাসতে হাসতে ট্রাম্পকে কিছু বলছিলেন। যা দেখে হেসে ফেলেন ট্রাম্প।
এর আগে মিশর যাওয়ার পথে নিজের বিমানেও সাংবাদিকদের কাছে ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতি নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন ট্রাম্প। সেই সময় ট্রাম্প বললেন, শুল্ক ওয়াশিংটনকে কূটনৈতিক ও আলোচনার শক্তি দিয়েছে। তিনি বলেন, 'শুল্ক আমাদের কূটনৈতিক ও আলোচনার শক্তি দিয়েছে। আমি শুল্কের উপর ভিত্তি করে কয়েকটি যুদ্ধ নিষ্পত্তি করেছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। আমি বলেছিলাম, আপনারা যদি যুদ্ধে লড়াই করতে চান এবং আপনাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকে, আমি আপনাদের দুজনের উপর ১০০ শতাংশ, ১৫০ শতাংশ এবং ২০০ শতাংশের মতো বড় শুল্ক আরোপ করতে চলেছি।'
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এরপরই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এরপর ৭ মে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি পরিকাঠামো লক্ষ্য করে 'অপারেশন সিঁদুর' শুরু করে ভারত। ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে শতাধিক সন্ত্রাসবাদীকে খতম করে ভারত। এর পরের দিনগুলিতে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছিল। পাকিস্তান ভারতীয় বিমানঘাঁটিগুলিতে আঘাত হানার চেষ্টা করেছিল। পালটা জবাবে পাকিস্তানের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিল ভারত। পাকিস্তানের ১১টি সামরিক ঘাঁটি অকেজো করে দিয়েছিল ভারত। রাওয়ালপিন্ডি, করাচি, লহোরের মতো শহরে আছড়ে পড়েছিল ভারতীয় মিসাইল। এই আবহে পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতির জন্য কাতর আর্তি জানিয়েছিল ভারতের কাছে। সেই আর্তি মেনে অপারেশন সিঁদুর স্থগিত করতে সহমত হয়েছিল ভারত।