হাতে গোনা আর কয়েকটা দিনের পরই তিনি হতে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে এরই মাঝে চরম অস্বস্তিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তাই এবার মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে গেলেন রিপাবলিকান নেতা। উল্লেখ্য, পর্ন তারকাকে দেওয়া ঘুষ সংক্রান্ত মামলায় এই সপ্তাহেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাজার ঘোষণা করা হবে। সেই মামলার রায় পিছিয়ে দেওয়ার জন্যে নিউইয়র্কের এক আদালতে আপিল করেছিলেন ট্রাম্প। তবে তাঁর সেই আর্জি খারিজ করে দেয় আপিল আদালত। এই আবহে এবার এই মামলায় রায় ঘোষণা পিছিয়ে দিতে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। (আরও পড়ুন: মণিপুরে কি সত্যিই স্টারলিঙ্কের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল? তদন্ত শুরু কেন্দ্রের)
আরও পড়ুন: গ্রিনল্যান্ড 'কিনতে চান' ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন বিদেশ সচিব বলে দিলেন...
জানা গিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে জরুরি ভিত্তিতে আবেদন করেছেন ট্রাম্প। তাঁর হয়ে এই মামলা করা আইনজীবীদের মধ্যে আছেন জন সওয়ার। উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসনে তিনিই পরবর্তী মার্কিন সলিসিটর জেনারেল হতে চলেছেন। ট্রাম্পের সুপ্রিম আবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে যদি তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা শোনানো হয়, তাহলে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর কার্যকালে এর প্রভাব পড়বে। এদিকে আরও দাবি করা হয়েছে, ট্রাম্প যেহেতু এই মামলায় নিউইয়র্ক আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন, এই আবহে তাঁর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করার এক্তিয়ার নেই নিউইয়র্কের আদালতের।
উল্লেখ্য, আগামী ২০ জানুয়ারি ফের রাষ্ট্রপতি পদে বসতে চলেছেন ট্রাম্প। তার আগে শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণার কথা আদালতের। এর আগে এই মামলায় ৩৪টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ট্রাম্প। এই আবহে সেই রায়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্প উচ্চ আদালতে আবেদন জানাতে চলেছেন। আর তাই আপাতত নিউইয়র্কের নিম্ন আদালতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যাতে কোনও সাজা ঘোষণা না হয়, সেই আবেদনই জানানো হয়েছিল। তবে হবু মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ট্রাম্পের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, যেমন ভাবে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যায় না, তেমনই প্রেসিডেন্ট ইলেক্টের ক্ষেত্রেও সেই রক্ষাকবচ বজায় থাকা উচিত। তবে বিচারক সেই যুক্তিতে সায় দেননি। এদিকে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ট্রাম্প উচ্চ আদালতে যেতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। এর আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলার রায় খারিজের আবেদন করা হয়েছিল। তবে সেই মামলায় মার্কিন বিচারক রায় দিয়েছিলেন, যৌন কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে নথি জালিয়াতির দায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দোষী সাব্যস্ত হওয়া উচিত। উল্লেখ্য, এই নিয়ে ট্রাম্পের আইনজীবীর যুক্তি ছিল, রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ট্রাম্পের মাথায় যদি এই মামলার খাড়া ঝুলতে থাকে, তাহলে তাঁর শাসন ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এরই সঙ্গে ট্রাম্পের আইজীবীর দাবি ছিল, সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি যে রায় দিয়েছে, তাতে ট্রাম্পকে আর দোষী সাব্যস্ত করা যায় না এই মামলায়। তবে ৪১ পৃষ্ঠার রায়ে বিচারক হুয়ান মারচান বলেন, 'ব্যবসায়িক নথি জাল করার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব ও কার্যক্রমে হস্তক্ষেপের কোনও ঝুঁকি তৈরি করে না।'
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে পর্নস্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় মোট ৩৪টি অভিযোগের সবকটিতেই দোষী সাব্যস্ত হন ট্রাম্প। এই আবহে ট্রাম্পই প্রথম 'প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট', যিনি কি না ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। তবে এবার তিনি আবারও প্রেসিডেন্টের গদিতে বসতে চলেছেন। প্রসঙ্গত, প্রথম মার্কিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনও ফৌজদারি মামলার বিচারে হাজির হয়ে লজ্জার ইতিহাস গড়েছিলেন ট্রাম্প। আর সেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েও ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছিলেন এই রিপাবলিকান। এই আবহে ট্রাম্পের সাজা হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচনে জয়ের পর সেই সাজা পিছিয়ে দেন বিচারক।
উল্লেখ্য, নিজের যৌন কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছিল নিউ ইয়র্কের আদালতে। সেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে 'ইতিহাস' গড়েছিলেন ট্রাম্প। এই মামলায় মোট ৩৪টি অভিযোগ ছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। তবে এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েও প্রেসিডেন্ট হতে কোনও বাধা নেই ট্রাম্পের সামনে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারের সময় পর্নস্টার স্টর্মির মুখ বন্ধ করতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল এই মামলা। স্টর্মির দাবি, ২০০৬ সালে নেভেদায় সেলেব্রিটিদের একটি গলফ প্রতিযোগিতায় ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। এরপর ২০০৭ সালে একটি শো'তে অংশগ্রহণ করে লস অ্যাঞ্জেলসে বেভারলি হিলসে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বাংলোয় দেখা করেছিলেন স্টর্মি।
এরপর ২০১১ সালে ইন টাচ ম্যাগাজিনে স্টর্মি দাবি করেন যে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। সেই সংক্রান্ত একাধিক তথ্যও দিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে ট্রাম্প তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন। এই বিতর্কের পর ২০১৬ সালে রিপাবলিকানদের হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ান ট্রাম্প। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের অক্টোবরে ট্রাম্পের সঙ্গে 'সম্পর্কের' বিষয় নিয়ে মুখ না খোলার জন্য স্টর্মিকে ১৩০,০০০ মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের আইনজীবী। এরপর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে ট্রাম্পের আইনজীবী দাবি করেছিলেন যে স্টর্মিকে নিজের থেকে অর্থ দিয়েছিলেন। ট্রাম্প ওই বিষয়ে কোনও নির্দেশ দেননি। তবে আদালতে এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ট্রাম্প।