বহু প্রতীক্ষিত করোনা টিকাকরণ প্রকল্পের সূচনা হল ভারতের। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যে, একটি নয় দুটি নির্ভরযোগ্য ভ্যাকসিন তৈরি করেছে ভারত বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে, সেই কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রথম দিনেই দেশজুড়ে ৩০০৬ কেন্দ্রে প্রায় তিন লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। এভাবে প্রথম ধাপে তিন কোটি স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য ফ্লন্টলাইন কর্মীদের টিকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে আছেন সেনাবাহিনীর মানুষও। পুরো বিষয়টি নিয়ে এদিন বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে বলেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন যে ভারতের প্রতিভা ও বৈজ্ঞানিক ক্ষমতার জীবন্ত উদাহরণ হল করোনা টিকা। মানবিকতার নীতি অনুযায়ী টিকা দেওয়া হবে যেখানে আগে টিকাকরণ হবে চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল ও প্যারা মেডিক্যাল কর্মীদের। রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে একযোগে ভ্যাকসিন ড্রাই রান করা হয়েছে বলে জানান মোদী।
একটি আশংকা আছে যে অনেকে হয়তো শুধু একটি ডোজই নেবেন। সেই বিষয়টি বিশেষ করে উল্লেখ করেন মোদী যে দুটি ডোজ নেওয়া খুবই প্রয়োজনীয়। দ্বিতীয় ডোজটি না নেওয়ার ভুল করবেন না, আর্জি জানান তিনি। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকেই করোনা প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হবে মানুষের শরীরে।
যুদ্ধের মতো এই টিকাকরণের সময়ও ধৈর্য্য ধরতে হবে সবাইকে বলে জানান মোদী। এই প্রকল্পটি কতটা বৃহৎ সেটা বোঝাতে গিয়ে মোদী বলেন যে ১০০টির বেশি দেশের জনসংখ্যা তিন কোটির কম। সেখানে ভারত প্রথম ধাপেই তিন কোটি মানুষকে টিকা দেবে।
যখন বিজ্ঞানীরা একশো শতাংশ নিশ্চিত হন টিকার ক্ষমতা সম্পর্কে, তখনই জরুরি ব্যবস্থার জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। মানুষকে গুজবে কান না দিতে বলেন তিনি। সারা বিশ্বে শিশুদের যে টিকা দেওয়া হয়, তার ৬০ শতাংশ তৈরি করা হয় ভারতে। সেই কারণে ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা আছে বলে মনে করেন তিনি।
কোভিডের বিরুদ্ধে এই টিকার মাধ্যমেই জয় আসবে বলে আশাবাদী মোদী। ভারতীয় টিকা যে বিশ্বের অন্যান্য টিকার থেকে অনেক সস্তা, সেটাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বড় সংকটেও ভারত আত্মবিশ্বাস হারায়নি ও আত্মনির্ভর হয়ে কাজ করেছে, সেই কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। একই সঙ্গে করোনা যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কথা, জীবন বলিদানের কথাও এই বিশেষ দিনে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনেক বিশেষজ্ঞ যে ভারত কীভাবে কোভিড সামলাবে সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেটাও মনে করিয়ে মোদী বলেন যে ঠিক সময় ঠিক সিদ্ধান্তের ফলেই সমস্যার নিরসন করা গিয়েছে। মোদী দাবি করেন যে ভারত প্রথম দেশ যারা এয়ারপোর্টে স্ক্রিনিং শুরু করেছিল। জনতা কার্ফুর মধ্যে দিয়ে লকডাইনের জন্য সবাইকে প্রস্তুত করা হয়। অর্থনীতির জন্য লকডাউন খারাপ হবে জেনেও জীবন বাঁচানোর ওপর জোর দেওয়া হয় বলে জানান মোদী। অনেক দেশ চিনে নিজেদের নাগরিকদের ফেলে রাখলেও ভারত সেটা করেনি, সেটাও মনে করিয়ে দেন তিনি।
করোনার করাল গ্রাস যে সারা দেশে ছড়ায়নি, সেটা বলেন মোদী এই তথ্য তুলে ধরে যে বহু জেলায় একজনও কোভিডে মারা যাননি। ভারত তাদের সত্যিকারের চরিত্র তুলে ধরেছে কোভিডের সময়, দেখিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
সারা বিশ্ব ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে ও মানবতাকে সাহায্য করতে চায় দেশ ভ্যাকসিন প্রদান করে, ফের সেই অঙ্গীকারের কথা জানান মোদী। ভ্যাকসিন পেয়ে গেলেই যে সতর্কতা অবলম্বন করার ক্ষেত্রে ঢিলেমি দেওয়া যাবে না, সেই কথাও সবাইকে মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।