নিজের সারাজীবনের উপার্জন। প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এর পুরোটাই দরিদ্রদের সেবায় দান করে দিলেন উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদের এক শিল্পপতি। ডঃ অরবিন্দ কুমার গোয়েল নামের ওই শিল্পপতির কাহিনী ভাইরাল।
সারাজীবন পরিশ্রম করে কয়েকশো কোটি টাকার ব্যবসা গড়ে তুলেছেন ডঃ অরবিন্দ কুমার। এমন দুঁদে ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম হলেও বিরল বলা যায় না। কিন্তু এত বিপুল টাকা রোজগারের পর তার পুরোটাই দান? এমন ক'জন করতে পারেন। সেই বিরল জাতের মানুষের মধ্যেই পড়েন ডঃ অরবিন্দ কুমার।
রিপোর্ট অনুযায়ী তাঁর সমস্ত উপার্জন রাজ্য সরকারের সামাজিক খাতে দান করেছেন তিনি। পুরোটাই দরিদ্র ও অনাথ শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসার কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মোরাদাবাদের সিভিল লাইনে ডঃ অরবিন্দ কুমার গোয়েলের একটি বাংলো আছে। আপাতত তাঁর সম্পত্তি বলতে এই বাংলোটিই। সোমবার রাতে নিজের সবকিছু দান করার ঘোষণা করেন তিনি। এমনতিই সমাজসেবী ও প্রখ্যাত শিল্পপতি হিসাবে মোরাদাবাদে তিনি বেশ জনপ্রিয়। তাঁর এই ঘোষণার খবর ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাঁর বাংলোয় ভিড় জমাতে থাকে।
সিদ্ধান্তে স্ত্রী ও সন্তানদের সমর্থন
অনেক সময়ে নিজের ইচ্ছা থাকলেও পরিবারের কথা ভেবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। তবে এক্ষেত্রে তার ব্যাতিক্রম হয়েছে।
স্ত্রী রেনু গোয়েল ছাড়াও তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে এতে সমর্থন করেছেন। তার বড় ছেলে মধুর গোয়েল মুম্বইতে থাকেন। ছোট ছেলে শুভম প্রকাশ মোরাদাবাদেই থাকেন। তিনিও বাবার মতো। ব্যবসার সময়টুকু বাদ দিলে সমাজসেবাই ধ্যান-জ্ঞান। ফলে তাঁরা যে এতে বাবাকে শুধু সায় দিয়েছেন, তা-ই নয়, উল্টে সমর্থন করেছেন।
একটি ঘটনায় বদলে গিয়েছিল শিল্পপতির জীবন
যাঁর কাছে যত বেশি সম্পদ, তাঁর পক্ষে সেই মায়া কাটানোও তত কঠিন। সামান্য কয়ের লক্ষ টাকার মায়াতেই মানুষ সম্পর্ক ভাঙতে দ্বিধা বোধ করেন না। আর সেখানে ৬০০ কোটি টাকা কীভাবে অবলীলায় দান করলেন তিনি?
এর নেপথ্যে রয়েছে ২৫ বছর আগের একটি ঘটনা। যা ডঃ গোয়েলের জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে দেয়।
ডঃ গোয়েলের থেকেই শুনে নিন সেই কাহিনী-
ডিসেম্বর মাস। ট্রেনে করে এক জায়গায় যাচ্ছিলাম। কনকনে ঠাণ্ডা। জবুথবু হয়ে বসে আছি। হঠাত্ দেখলাম, আমার সামনের সিটে বসা এক ব্যক্তি শীতে থরথর করে কাঁপছেন। তাঁর পায়ে সামান্য চপ্পল-টুকুও ছিল না। আমার দেখে এত কষ্ট হল। একবার ভাবলাম আমার জুতোটা খুলে ওনাকে পরতে দিই। কিন্তু নিজের ঠান্ডা লাগবে ভেবে সেটা করলাম না।
সেই রাতেই পরে খুব অনুশোচনা হয়েছিল। বুঝতে পেরেছিলাম, কত মানুষ এই প্রবল শীতে হিমশিম খাচ্ছে। সেই দিন থেকেই আমার ভাবনা-চিন্তা পাল্টে যায়। তখন থেকেই আমি গরিব ও দুস্থদের যথা সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা শুরু করি।
এর পর পেশার দিক দিয়ে জীবনে অনেক সাফল্য পেয়েছি। কিন্তু জীবনের প্রতি আমার কোনও আস্থা নেই। আজ আছি, কাল নেই। তাই আমি বেঁচে থাকতেই আমার সম্পত্তি সঠিক হাতে তুলে দিচ্ছি। আমার উদ্বৃত্ত সম্পদ যাতে কিছু অভাবী মানুষের কাজে লাগে। আমার সম্পত্তি দান করার জন্য জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি।
ডঃ গোয়েলের রক্তেই দেশপ্রেম
ডঃ গোয়েলের বাবা প্রমোদ কুমার গোয়েল এবং মা শকুন্তলা দেবী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁর শ্যালক প্রধান নির্বাচন কমিশনার। ডঃ গোয়েলের জামাই কর্নেল এবং শ্বশুর ও সেনাবাহিনীতে উচ্চপদে আসীন। ফলে দেশসেবা তাঁদের বংশে রক্তে রয়েছে।
চার রাষ্ট্রপতির হাতে সম্মানিত হয়েছেন
ডঃ গোয়েলকে তাঁর সামাজিক কাজের জন্য দেশের চার রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সম্মানিত হয়েছেন। সেই তালিকা আছেন রামনাথ কোবিন্দ, প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রতিভা দেবী পাতিল এবং ডঃ এপিজে আব্দুল কালাম।
ডঃ গোয়েল সারা দেশে শত শত অনাথ আশ্রম এবং স্কুল চালান
গত ২০ বছর ধরে সারা দেশে শত শত বৃদ্ধাশ্রম, লঙ্গরখানা ও বিনামূল্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালান তিনি। এ ছাড়াও তাঁর সহায়তায় পরিচালিত বিদ্যালয়ে দরিদ্র শিশুদের বিনামূল্যে পড়াশোনা করানো হয়।
কোভিড লকডাউনের সময়, তিনি প্রায় ৫০টি গ্রাম দত্তক নিয়েছিলেন। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের বিনামূল্যে খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করেছেন।