গত শনিবার জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র পেয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-র তৈরি নয়া ২-ডিজি ওষুধ। করোনা আক্রান্ত রোগীর অক্সিজেন নির্ভরতা কমাতে ও দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করবে এই 2-deoxy-D-glucose (2-DG) ।
করোনার দ্বিতীয় ওয়েভে দেশে তুঙ্গে অক্সিজেনের চাহিদা। এমন পরিস্থিতিতে এই ওষুধটি যেন এক চিলতে আশার আলো। আর তার প্রধান কারণ হল, করোনা রোগীর দেহে অক্সিজেনের চাহিদা হ্রাস করতে সক্ষম এই ওষুধ। ফলে, অক্সিজেন সংকটের মাঝে এই ওষুধটি যে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে, তা বলাই যায়। মনে করা হচ্ছে, মাসখানেকের মধ্যেই বাজারে আসবে ২-ডিজি।
কোনও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই :
এখনও পর্যন্ত তিনটি পর্যায়ে ট্রায়াল হয়েছে ২-ডিজির। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল রিপোর্ট যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। তবে, ডিআরডিও-র এই নয়া ওষুধ তৈরির প্রকল্প অধিকর্তা বিজ্ঞানী সুধীর চন্দানা জানিয়েছেন, 'মাঝারি থেকে গুরুতর অসুস্থ কোভিড রোগীকে এই ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যেকেই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাঁদের দেহে অক্সিজেনের চাহিদাও কমাতে সাহায্য করেছে এই ওষুধ। শুধু তাই নয়, কোনও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি।'
ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে, যাঁরা এই ওষুধ নিয়েছেন, তাঁরা অপেক্ষাকৃত দ্রুত করোনা নেগেটিভ হয়েছেন। ফেজ-২-তে মোট ১১০ জন করোনা রোগীর উপর ট্রায়াল করা হয়। তৃতীয় ফেজে ২২০ জনের উপর ট্রায়াল চালানো হয়। দেশের মোট ২৭টি কোভিড হাসপাতালে এই ট্রায়াল করা হয়েছিল।
ORS-এর মতো জলে গুলে পান করলেই হবে :
এই ওষুধটি গ্রহণ করাও সহজ। ORS-এর মতো জলে গুলে পান করলেই হবে।
কীভাবে কাজ করে এই ওষুধ?
বিশেষজ্ঞদের কথায়, 'এটি একটি কৃত্রিম, মডিফায়েড গ্লুকোজ অণু। দেহের করোনা আক্রান্ত কোষের ভিতরে এটি প্রবেশ করে যায়। এরপর সেই কোষের বিপাক প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেয়। এর ফলে ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। ফলে দেহে ছড়িয়ে পরতে পারে না। আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুস-সহ অন্যান্য অঙ্গে ক্ষতির সম্ভাবনা হ্রাস পায়। তাছাড়া এই একই কারণে রোগীর অক্সিজেনের চাহিদাও কমে যায়।'
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আহ্বান:
করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে সকল দফতরকে এগিয়ে আসার ডাকে সারা দিয়ে এই ওষুধের তৈরি শুরু করে DRDO । গত ২০২০ সালের এপ্রিলে DRDO-র INMAS ল্যাবরেটরিতে শুরু হয় এই ওষুধের প্রস্তুতি। পরীক্ষাগারে এটি করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর হিসেবে দেখা যায়।
এর পরেই ড্রাগস কনট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার (DGCI) পক্ষ থেকে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২০ সালের মে মাসে হয় ফেজ-২-এর ট্রায়াল। DRDO এবং ডক্টর রেড্ডিজ ল্যাবরেটরিজ (হায়দরাবাদ) ওষুধটি গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ও নিরাপদ বলে জানিয়েছে।