অজয় রামোলা
প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মাথায় কিনা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী 'টোপি' (টুপি)! বুধবার সকালে সেই দৃশ্য মন জিতে নিয়েছে উত্তরখাণ্ডের মুসৌরির। আর গর্বে বুক ফুলে উঠেছে শিল্পী এবং দর্জিদের। যাঁরা সেই ঐতিহ্যবাহী 'টোপির' নকশা তৈরি এবং সেলাইয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন।
শিল্পী ও দর্জিরা জানিয়েছেন, অনেকেই জানতেন মুসৌরির ঐতিহ্যবাহী ‘ব্রহ্মকমল’ টুপির বিষয়ে। আবার অনেকেই জানতেন না। ৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে মোদীর মাথায় সেই টুপি দেখার পর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর ফোন আসছে। তাতে রীতিমতো অবাকও হয়েছেন সমীর শুল্কা। যে ‘ব্রহ্মকমল’ টুপি তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। যিনি নয়া প্রজন্মের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী ‘ব্রহ্মকমল টোপি’ জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেইমতো নকশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ব্রহ্মকমল ফুল এবং প্রকৃতির চারটি উপাদানকে তুলে ধরতে চারটি রঙিন স্ট্রাইপ যোগ করে রাজ্যের যুব প্রজন্মের কাছে এই টুপিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চেয়েছিলাম আমরা। ব্রহ্মকমল ফুল তো কেদারনাথে মহাদেবকে দেওয়া হয়।’ সঙ্গে তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে যে পরিশ্রম করেছেন, তা অবশেষে সাধারণ মানুষের স্বীকৃতি পাওয়ায় অত্যন্ত খুশি হয়েছেন তাঁরা।
শুধু সমীর নন, বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর মাথায় তাঁদের নিজের হাতে তৈরি টুপি দেখে গর্ববোধ করছেন শিল্পীরাও। তেমনই একজন জগতম দাস (৭৫) বলেন, ‘আমার কাছে এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মুহূর্ত ছিল, যখন খোদ প্রধানমন্ত্রীকে আমার সেলাই করা টুপি পরতে দেখলাম। আমরা এখনও পর্যন্ত ৮,০০০-এর বেশি টুপি বিক্রি করেছি। আচমকা টুপির চাহিদা বেড়েছে।’ বছর ৭৫-র জগতম ২০১৭ সাল থেকেই সেই ‘ব্রহ্মকমল’ টুপি সেলাই করে আসছেন। সাক্ষী দেখেছেন সেই ‘টোপির’ উত্থানের। গত বছর দেশের প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স (সিডিএস) স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে সেই টুপি উপহার দেওয়া হয়েছিল। টুপি পাঠানো হয়েছিল জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকেও।
কিন্তু কীভাবে সেই ঐতিহ্যবাহী 'টোপি' প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাল? তা নিয়ে অবশ্য বিশেষ কিছু খোলসা করতে চাননি সমীর। যিনি মুসৌরিতে স্ত্রী কবিতার সঙ্গে সোহম হিমালয়ান আর্ট অ্যান্ড হেরিটেজ সংগ্রহশালা চালিয়ে আসছেন। তিনি শুধু বলেন, ‘আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি (কোন ব্যক্তি, তা জানাননি) গত সপ্তাহে টুপি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারপর সেই টুপি সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হয়। যা ৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে পরেছেন প্রধানমন্ত্রী।’ সঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি ১০০ শতাংশ মুসৌরির সামগ্রী দিয়ে তৈরি। ২০১৭ সালে সেই টুপি তৈরিতে ছয় থেকে সাতজন দর্জি যুক্ত ছিলেন। যে বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসে ব্রহ্মকমল টোপি বাজারে আনা হয়েছিল।’
তারইমধ্যে রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, সম্ভবত ভোটমুখী উত্তরাখণ্ডের ভাবাবেগকে ধরতেই ‘ব্রহ্মকমল টোপি’ পরেছিলেন। সেজন্য বেছে নিয়েছিলেন প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের মঞ্চকে। যে উত্তরাখণ্ডে সপ্তাহখানেক পরেই বিধানসভা ভোট হতে চলেছে। সেই ধারণা আদৌও সঠিক কিনা, তা নিশ্চিতভাবে বিতর্কসাপেক্ষ। তবে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে উত্তরাখণ্ডের ঐতিহ্যবাহী টুপি পরতে দেখে রীতিমতো আনন্দে ফেটে পড়েছেন মুসৌরির বাসিন্দা। তেমনই একজন রামপ্রকাশ পানওয়ার বলেন, ‘এটা নিশ্চিতভাবে একটি গর্বের দিন। উত্তরাখণ্ডের ঐতিহ্যবাহী টুপি পরেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যা শিল্পীদের ঐতিহ্য বজায় রাখার কাজে অনুপ্রাণিত করবে।’