নেহা এম ত্রিপাঠী
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে প্রস্রাব কাণ্ড নিয়ে তুমুল হইচই চলছে। তারইমধ্যে বিমানের মধ্যে আরও এক যাত্রীর কীর্তি সামনে এল। এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, গত সেপ্টেম্বরে মুম্বই-লন্ডন বিমানের এক যাত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
গত ৫ সেপ্টেম্বর এআই-১৩১ বিমানে সেই ঘটনা ঘটেছিল। বিমানের মধ্যে ওই ব্যক্তি আট বছরের এক মেয়েকে অশ্লীলভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। যে ব্যক্তি মদ খেয়ে নোংরামি করছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। ওই বালিকার মায়ের অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ওই বিমানে ছিলেন বালিকার ২০ বছরের দাদাও।
এয়ার ইন্ডিয়াকে লিখিত অভিযোগপত্রে বালিকার মা বলেছিলেন, 'এক মত্ত যাত্রীর কারণে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছিল আমার ২০ বছরের ছেলে এবং আট বছরের মেয়েকে। যে ব্যক্তিদের লাগাতার মদ দিয়েই যাচ্ছিলেন টাটা এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীরা। যে ব্যক্তি আমার ছেলে-মেয়ের পাশে বসে ওদের হেনস্থা করছিল। আমার মেয়েকে বাজেভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা ছিল। ওই ব্যক্তি কয়েকবার উইস্কি ও সোডা খাওয়ার পর সেই ঘটনা ঘটেছিল। যা দিয়ে যাচ্ছিলেন বিমানের কর্মীরা। কিন্তু যাত্রীকে কতটা (মদ) দেওয়া হবে, সেটার একটি সীমা থাকা উচিত।'
ওই মহিলা দাবি করেছিলেন, বিমানের বিনোদন ব্যবস্থা কাজ না করায় তাঁর ছেলে ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ঘুম থেকে উঠে ছেলে দেখেছিলেন যে তাঁদের পাশে বসে থাকা ওই মত্ত ব্যক্তিকে সতর্ক করছেন এক মহিলা। ওই ব্যক্তি পুরো মদে ডুবেছিলেন এবং নিজের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। অভিযোগপত্রে মহিলা বলেছেন, ‘আমার মেয়েকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিল ওই ব্যক্তি। তারপর হাত ছড়িয়ে বসে, যাতে আমার মেয়েকে স্পর্শ করতে পারে।’
ওই মহিলা আরও বলেন, 'আমার ছেলে যখন জানতে চায় যে কী করার চেষ্টা করছে, তখনই বিমানকর্মীদের ডেকে আনে। সেইসঙ্গে নিজের ভাষা ও ইংরেজিতে আমার ছেলে ও মেয়েকে গালিগালাজ করতে থাকে।' সেইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলে ও মেয়েকে কোনওরকম সাহায্য করেননি বিমানকর্মীরা। বরং যে মহিলা যাত্রী সাহায্য করেছিলেন, তিনি ছেলে ও মেয়েকে আসন পরিবর্তন করিয়েছিলেন।
যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। বিষয়টি নিয়ে উড়ান সংস্থার মুখপাত্র বলেন, '(লন্ডনে বিমানের) অবতরণের পর অভিযুক্ত যাত্রীকে বের করে নিয়ে গিয়েছিল মেট্রোপলিটন পুলিশ। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানকর্মীরা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে বয়ান রেকর্ড করেছিলেন। ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিষয়টি ডিজিসিএকে জানানো হয়েছিল।' বিষয়টি নিয়ে অবশ্য কিছু জানানো হয়নি বলে ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট অফ সিভিল অ্যাভিয়েশনের (ডিজিসিএ) তরফে দাবি করা হয়েছে।
টাটা গোষ্ঠীর মালিকাধীন এয়ার ইন্ডিয়ার মুখপাত্র দাবি করেন, ওই আট বছরের মেয়েকে সবরকমের সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছিল। তিনি বলেন, 'এয়ার ইন্ডিয়া নিশ্চিত করছে যে ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মুম্বই-লন্ডন বিমানে একটি ঘটনা ঘটেছিল। অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন বিমানকর্মীরা এবং অভিযুক্ত যাত্রীকে আলাদাভাবে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নির্যাতিতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিমানকর্মীরা এবং সবরকমের সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছিল। তাকে সাহায্য করেছিলেন বিমানকর্মীরা। পরিবারকে অন্য আসনে সরিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন।'
আরও পড়ুন: AI Urinating Incident: বিমানে প্রস্রাবকাণ্ডে নয়া মোড়, এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ সহযাত্রীর?
এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তাতে এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং যাত্রীদের প্রতিনিধি ছিলেন। ছিলেন উড়ান সংস্থার এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও। ওই কমিটি একাধিকবার বৈঠকে বসেছে। আগামী মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) ফের বৈঠক হবে। তারইমধ্যে তদন্তের ক্ষেত্রে লন্ডনের পুলিশকে যাবতীয় সাহায্য করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে এয়ার ইন্ডিয়া।
সেই বিষয়টি সামনে আসার পরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি ভুল থেকেও শিক্ষা নেয়নি এয়ার ইন্ডিয়া? কারণ ২৬ নভেম্বর এয়ার ইন্ডিয়ার দিল্লি-প্যারিস বিমানে এক বৃদ্ধার গায়ে এক মদ্যপ ব্যক্তি প্রস্রাব করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই ঘটনায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানকর্মীদের বিরুদ্ধে ঠিকভাবে সাহায্য না করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তারইমধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।