নাম - দীপক। বয়স ২৪ বছর। আদতে ভারতের পঞ্জাবের বাসিন্দা হলেও তিনি দুবাইয়ে শ্রমিকের কাজ করেন। বাড়ি ফিরেছেন মাস খানেক আগে। সেই দীপকই জলন্ধর জেলার মান্ডিয়ালি গ্রাম থেকে বর বেশে মোগা শহরে পৌঁছন। তাঁর বাহন বলতে ছিল, ফুল দিয়ে সাজানো সুদৃশ্য একটি চারচাকা গাড়ি।
এককথায় বিয়ে করে নতুন বউকে সঙ্গে নিয়ে ফেরার জন্য সবরকম ব্যবস্থাই করে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু, বদলে যা ঘটল, তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না এই যুবক। এমন আজব ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন তাঁর সঙ্গে আসা ১৫০ জন বরযাত্রীও। যাঁরা এসেছিলেন আরও একাধিক ছোট ও বড় গাড়িতে।
ঘটনা প্রসঙ্গে যেটুকু জানা গিয়েছে, তা হল - দীপক এসেছিলেন তাঁর প্রেমিকা মনপ্রীত কউরের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়তে। মনপ্রীতের সঙ্গে দীপকের আলাপ হয়েছিল ইনস্টাগ্রাম মারফত। প্রায় তিন বছর তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলেও দাবি করা হচ্ছে।
কিন্তু, বিষয়টা হল, সবটাই ছিল ভার্চুয়াল। এই দীর্ঘ সময়ে কখনও কোনও সম্মুখ সাক্ষাৎ ঘটেনি। দীপকের দাবি, তিন বছর ধরে সম্পর্কে থাকার পর তিনি এবং মনপ্রীত স্থির করেন, তাঁরা এবার বিয়ে করবেন। এরপর মোবাইলেই মনপ্রীতের বাবা-মায়ের সঙ্গে দীপকের পরিবারের সদস্যরা কথা বলেন!
স্থির করা হয়, ৬ ডিসেম্বরই (২০২৪) চার হাত এক করে দেওয়া হবে। দীপকের দাবি, মনপ্রীত ও তাঁর বাবা-মা নাকি তাঁদের বলেছিলেন, ৬ ডিসেম্বর সটান মোগা শহরে পৌঁছে যেতে। শুধু তাই নয়, দীপক যাতে অন্তত ১৫০ জন বরযাত্রী সঙ্গে নিয়ে আসেন, সেই কথাও তাঁদের বলে দেওয়া হয়েছিল!
কিন্তু, গত শুক্রবার মোগা পৌঁছানোর পর দীপক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারেন, মোগা শহরের যে জায়গায় তাঁদের পৌঁছতে বলা হয়েছিল, আসলে সেই নামে কোনও স্থানই ওই শহরে নেই। এমনকী, ততক্ষণে মনপ্রীতও চলে গিয়েছেন 'নাগালের বাইরে'!
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ এই সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, সেই অনুসারে - শুক্রবার দুপুরে মোগা পৌঁছন দীপক ও তাঁর আত্মীয়-বন্ধুরা। তারপর তাঁর মনপ্রীতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
প্রথমে কয়েকবার মনপ্রীত দীপকের ডাকে সাড়া দেন এবং জানান, শীঘ্রই তাঁদের আত্মীয়রা পৌঁছে যাবেন এবং দীপকদের বিবাহবাসর পর্যন্ত পথ চিনিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু, বিকেল ৫টা বেজে যাওয়ার পরও সেই আত্মীয়দের দেখা পাওয়া যায়নি! এরপর মনপ্রীতকেও আর ফোনে পাওয়া যায়নি। ততক্ষণে তাঁর মোবাইল 'সুইচড অফ' মোডে চলে গিয়েছে।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে এভাবে অপেক্ষা করার পর দীপক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় থানায় যান। সেখান তাঁরা মনপ্রীত কউর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
সেই অভিযোগপত্রে নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি মনপ্রীতের সম্পর্কেও নানা তথ্য দেন দীপক। তিনি জানান, মনপ্রীত তাঁকে বলেছিলেন, তিনি পেশায় একজন আইনজীবী। এবং ফিরোজপুরে তাঁর যথেষ্ট ভালো পসার রয়েছে।
দীপক জানিয়েছেন, তিনি মনপ্রীতের ছবিই শুধু দেখেছেন। তাও ইনস্টাগ্রামে। সামনাসামনি কখনও তাঁদের সাক্ষাৎ হয়নি। মনপ্রীত তাঁকে বলেছিলেন, তাঁদের বিয়ের আসর বসবে, মোগা শহরের 'রোজ গার্ডেন প্যালেস'-এ। কিন্তু, মোগায় পৌঁছে দীপক জানতে পারেন, ওই শহরে এমন কোনও জায়গাই নেই!
দীপক এও জানিয়েছেন, 'বিয়ের খরচ' বাবদ তিনি মনপ্রীতকে অনলাইনে ৫০ হাজার টাকাও পাঠিয়েছিলেন!