যে দৃশ্যের জন্য অনেক তপস্যা করতে হয়, সেটা দেখা গেল আন্দামানে। ভারত সরকারের পরিবেশ মন্ত্রকের আওতাধীন স্বশাসিত সংস্থা 'ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিটউ অফ ইন্ডিয়া'-র (WWI) বিজ্ঞানীদের ক্যামেরায় আন্দামানে জলের তলায় ধরা পড়েছে সেই বিরল দৃশ্য। যে ভিডিয়োয় সমুদ্রের জলের তলায় ‘ডুগং’-কে খাবার খেতে দেখা গিয়েছে। 'ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিটউ অফ ইন্ডিয়া'-র অধিকর্তা বীরেন্দ্র আর তিওয়ারি। তিনি বলেছেন, ‘(শুক্রবার) আন্দামানে ডুডঙের খাওয়ার দুর্দান্ত ফুটেজ পেয়েছে আমাদের টিম। যে দলে ছিলেন স্বপ্নালি গোলে (ডুগং সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রিন্সিপাল প্রজেক্ট অ্যাসোসিয়েট) এবং সুমিত প্রজাপতি (প্রজেক্ট অ্যাসোসিয়েট-১)। যা একটা বিরল দৃশ্য।’
বিভিন্ন কারণে ‘ডুগং’-র সংখ্যা কমছে
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রের নীচে যে দৃশ্য ধরা পড়ল, তা আন্দামান সাগরে ‘ডুগং’-র সংখ্যা বৃদ্ধির আশা আরও কিছুটা বাড়িয়ে তুলল। আসলে ভারতীয় উপকূলবর্তী এলাকার জলের ‘ডুগং’-র সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সংরক্ষণের জন্য এক দশক ধরে বিশেষ কর্মসূচি চালিয়ে আসছে ‘ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিটউ অফ ইন্ডিয়া’। রাসায়নিক দূষিত পদার্থ, ট্রলারের দাপাদাপি বৃদ্ধির পাওয়ার মতো বিভিন্ন কারণে যে প্রজাতির সংখ্যা ক্রমশ যাচ্ছে।
‘ডুগং’ আসলে কী?
'অর্ডার সিরেনিয়া'-র যে চারটি প্রজাতির অস্তিত্ব এখনও আছে, সেটার মধ্যে অন্যতম হল ‘ডুগং’। যা 'সামুদ্রিক গরু' হিসেবেও পরিচিত। ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণ (সংরক্ষণ) আইনের প্রথম তফসিলের আওতায় ‘ডুগং’-কে ভারতে সংরক্ষিত প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ ভারতীয় ভূখণ্ডে ‘ডুগং’-কে সর্বোচ্চ সুরক্ষা প্রদান করে হয়ে থাকে। আর সেই প্রজাতির প্রাণীদের কোনওরকম ব্যবসার অনুমতি দেওয়া হয় না। শিকার করার তো কোনও প্রশ্নই নেই।
‘পেটে টাকার বাক্স' থেকে 'শ্রীকৃষ্ণের গরু’- ভারতীয় সংস্কৃতিতে জড়িয়ে ডুগং
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের স্থানীয় সংস্কৃতি এবং পুরাণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে 'ডুগং'। তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী এলাকার মানুষ মনে করেন যে 'ডুগং' হল 'কড়াল কান্নি - সমুদ্রের স্বর্গদূত'। আর মানুষের মাথা আছে 'ডুগং'-র। অন্যদিকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নীল আইল্যান্ডে যাঁরা 'ডুগং' নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা সেই প্রাণীর নাম দিয়েছেন ‘জলের গরু’।
আরও পড়ুন: Black Leopard Video: ফের বাংলায় দেখা মিলল কালো চিতাবাঘের, রাস্তার পাশে বসে, জ্বলজ্বল করছে চোখ
আবার গুজরাটের প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, মানুষ মনে করেন যে গরুকে ভালোবাসতেন দ্বারকার রাজা শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর রাজ্যে প্রচুর গরুও ছিল। দ্বারকা সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার আগে শ্রীকৃষ্ণ নিজের প্রিয় প্রাণীদের এমন ক্ষমতা দিয়ে গিয়েছিলেন যে তারা সমুদ্রেও বেঁচে থাকতে পারে। আবার পাম্বান দ্বীপের মানুষ বিশ্বাস করেন যে প্রত্যেক 'ডুগং'-র পেটে টাকার বাক্স আছে।