ক্রিকেটের ভাষায় ভারতের বর্তমান বিদেশ নীতির ব্যাখ্যা করলেন বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আসলে, বৃহস্পতিবার একটি বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। বইটি লিখেছেন, ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন তারকা সদস্য মোহিন্দর অমরনাথ।
সেই অনুষ্ঠানে হাজির হয়েই ক্রিকেটের সঙ্গে নানাভাবে ভারতীয় বিদেশ নীতি ও তাতে ঘটে চলা নানা বদলের তুলনা টানেন জয়শঙ্কর। প্রসঙ্গত, অমরনাথ যে বইটি লিখেছেন, তার নাম - 'ফিয়ারলেস'! যার আক্ষরিক অর্থ 'অকুতোভয়' বা 'নির্ভীক'!
অনুষ্ঠান মঞ্চে ভারতের দ্বারা ১৯৮৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের ঘটনাটি উল্লেখ করেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, 'এই বিষয়ে কারও মনে কোনও সন্দেহ নেই যে ১৯৮৩ সালটি আসলে ছিল বিবর্তনের সন্ধিক্ষণ (ইনফ্লেকশন পয়েন্ট)। বস্তুত, এটি কেবলমাত্র ইনফ্লেকশন পয়েন্ট নয়। বরং, একে বলা যায়, ইনফ্লেকশন পয়েন্টেরও ম্যান অফ দ্য ম্যাচ!...'
'...একটি পর্যায় পর্যন্ত পাকিস্তান জিতেছিল এবং শ্রীলঙ্কাও এক পর্যায় পর্যন্ত জিতেছিল। কিন্তু, আসল যে ঘটনা ঘটেছিল, তাতে ক্রিকেটের ইতিহাস বদলে গিয়েছিল। কারণ, আপনারা যদি ১৯৮৩ সালের পর বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতের ভূমিকা দেখেন, তাহলেই বুঝবেন, ভারত আসলে এর ভিত্তিই পরিবর্তন করে দিয়েছিল।'
এরপরই ক্রিকেট ও ভারতের বিদেশ নীতির মধ্যে এক অনবদ্য তুলনা টানেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, 'ভারতীয় ক্রিকেটে যেভাবে লাগাতার বিবর্তন হয়েছে, আমি তার সঙ্গে ভারতীয় বিদেশ নীতির বিবর্তনের তুলনা করব। এবং তার সঙ্গে আমি ভারতের বিবর্তনেরও তুলনা করতে চাইব।'
এমনকী, এই তুলনা টানতে গিয়ে অমরনাথের সদ্য প্রকাশিত বইটি থেকে একের পর এক উদ্ধৃতি করতেও শোনা যায় বিদেশ মন্ত্রীকে।
তিনি বলেন, 'প্রথমেই বলব, এই বিশ্বে প্রতিযোগিতা অত্যন্ত বেশি। কিন্তু, এখানে সম্মানও অর্জন করা যায়। ঠিক এই কারণেই যে ক্লাইভ লয়েড ১৯৭৬ সালে বডি লাইন বোলিং করতে এতটুকুও দ্বিধাবোধ করেননি, কাউকে রেয়াত করেননি, সেই একই ব্যক্তিকে বলতে হয়েছিল, ১৯৮৩ সালের পিচ আনফিট ছিল! আর ঠিক এভাবেই, এমন নানাভাবে সম্মান অর্জন করে নিতে হয়।'
একজন মানুষ চাইলে কতটা বদল আনতে পারেন, তা বোঝাতে গিয়েও অমরনাথের লেখা 'ধার' করেন জয়শঙ্কর। তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, অনেকেই বিদেশ নীতি বিশ্লেষণ করার সময়, এর সঙ্গে দাবার তুলনা টানেন। কিন্তু, এটা মোটেও দাবার মতো নয়।
জয়শঙ্করের কথায়, 'এটা আসলে অনেক বেশি ক্রিকেটের মতো। আর কেন প্রথমেই ক্রিকেটের কথা বলছি? কারণ, ক্রিকেটে একসঙ্গে অনেক খেলোয়াড় ময়দানে নামেন। উপরন্তু, কোন পরিস্থিতিতে আপনি খেলছেন, তাতেও অনেক কিছু নির্ভর করে এবং বদলে যায়। নিজের দেশের মাটিতে খেলা আর বিদেশে গিয়ে খেলা এক জিনিস নয়।...'
'...তাছাড়া, আপনাকের আম্পায়ারের উপর নির্ভর করতে হয়। খেলার নানারকম ধরনও হয়। এবং দিন শেষে এটা অনেকটাই স্নায়ুর লড়াই। অন্য পক্ষ কী ভাবছে, সেটা আপনাকে বুঝতে হবে এবং সেই ভাবনাকে আপনার পরিকল্পনা দিয়ে ছাপিয়ে যেতে হবে। আপনি যতবার তাদের মাঠে যাবেন, ততবারই আপনার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মানসিকতা আপনাকে বলবে, আমাকে জিততেই হবে।'
এরপর সরাসরি জয়শঙ্কর বলেন, 'তাহলে ক্রিকেটার হলেন সেইসব মানুষ, যাঁরা অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতিতেও অন্য পক্ষের আচরণ দেখে বুঝে যান, তাদের মাথায় কী চলছে।...' তাঁর বার্তা, বিদেশ নীতির ক্ষেত্রেও এভাবেই অন্য পক্ষের আচরণ দেখে তাদের কৌশল বুঝতে হয়।
এছাড়াও জয়শঙ্কর ভারত সম্পর্কে বলেন, আজকের ভারত হল, সেই ভারত, যার সঙ্গে বিশ্বের বাকি সকলেই খেলতে আগ্রহী। অর্থাৎ - এই মুহূর্তে বিশ্বের বাকি সমস্ত দেশই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতে আগ্রহী।