চলতি মাসেই পাকিস্তান সফরে যাবেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। শুক্রবার, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা জানান বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।
তাঁর দেওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি অক্টোবর মাসেই পাকিস্তানে 'সাংহাই কর্পোরেশ অর্গানাইজেশন সামিট' বা এসসিও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেই অনুষ্ঠানে সপার্ষদ যোগ দেবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর।
শুক্রবার এই প্রসঙ্গে রণধীর বলেন, 'পাকিস্তানে আয়োজিত হতে চলা এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে যাবে ভারতীয় প্রতিনিধি দল। সেই দলের নেতৃত্বে থাকবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। আগামী ১৫ এবং ১৬ অক্টোবর ইসলামাবাদে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।'
সীমান্ত সন্ত্রাস নিয়ে পাকিস্তানকে সতর্ক করেন জয়শংকর
ভারতের বিদেশমন্ত্রীর আসন্ন এই পাক সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। কারণ, কিছু দিন আগেই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ড সন্ত্রাস চালানোর জন্য প্রতিবেশী পাকিস্তানের উদ্দেশে তোপ দেগেছিলেন জয়শংকর।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর আয়োজিত রাষ্ট্র সংঘের সাধারণ সভায় পাকিস্তানকে কড়া ভাষায় সতর্ক করেছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, 'বহু দেশেই এমন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে, যেগুলির নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে থাকে না। ফলে তাদের পিছিয়ে পড়তে হয়। কিন্তু, এমন কিছু দেশও আছে, যারা স্বেচ্ছায় বিপর্যয় বেছে নেয়। যার অন্যতম প্রধান উদাহরণ হল, আমাদের প্রতিবেশী পাকিস্তান।'
পাকিস্তানকে কাঠগড়ায় তুলে জয়শংকর সেদিন আরও বলেছিলেন, 'যখন এই ধরনের রাজনীতির ফলে সেই দেশের জনগণ ধর্মান্ধ হয়ে ওঠে, তখন কেবলমাত্র চরম মৌলবাদ এবং অন্য দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমেই সেই দেশের জিডিপি পরিমাপ করা যায়। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, অন্যদের ক্ষতি করার জন্য সন্ত্রাসের যে বীজ বপন করা হয়েছিল, তা তাদের নিজেদের সমাজকেই গিলে খাচ্ছে। ওরা চাইলে এর জন্য বাকি বিশ্বকে দোষারোপ করতেই পারে। কিন্তু, এটা আসলে ওদেরই কর্মফল।'
উল্লেখ্য, জয়শংকর যেদিন রাষ্ট্র সংঘের সাধারণ সভার মঞ্চ থেকে পাকিস্তানকে উদ্দেশ করে কড়া বার্তা দেন, তার ঠিক একদিন আগে, সেই মঞ্চে বক্তৃতা করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ।
শরিফের সেই বক্তৃতার প্রসঙ্গ তুলে জয়শংকর বলেন, 'আমরা গতকাল ঠিক এই মঞ্চ থেকে ওদের তরফ থেকে কিছু উদ্ভট কথা শুনেছি। আমি তাই ভারতের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট করে দিতে চাই।'
এরপরই সীমান্ত সন্ত্রাস নিয়ে পাকিস্তানকে সতর্ক করেন জয়শংকর। বলেন, 'পাকিস্তান সীমান্তের ওপার থেকে সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই নীতি কোনও দিন কার্যকর প্রমাণিত হবে না এবং পাকিস্তান এর দায়ও কখনও এড়াতে পারবে না। বদলে, ওদের এর ফল ভুগতে হবে।'
রাষ্ট্র সংঘের মঞ্চে তাঁর সেই কূটনৈতিক আক্রমণের পর একমাস কাটতে না কাটতেই পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব কিছুটা কমবে? জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
প্রসঙ্গত, গত মাসে রাষ্ট্র সংঘরে সাধারণ সভায় পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, 'প্য়ালেস্তাইনের মানুষের মতোই জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দারাও তাঁদের স্বাধীনতা অর্জন করতে ও আত্মসম্মানের স্বার্থে লড়াই করে চলেছেন।' শেহবাজ শরিফের এই মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই, ওই একই মঞ্চে এর কড়া জবাব দিয়েছিলেন জয়শংকর।