পরপর কয়েকবার হালকা থেকে মৃদু কম্পন অনুভূত হচ্ছিল। এবার বেশ জোরালো ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল উত্তর ভারতের একাংশ। শুক্রবার রাতে পঞ্জাব, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, জম্মু ও কাশ্মীরে-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ কম্পন অনুভূত হয়েছে। তার জেরে সেখানে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
জাতীয় ভূতাত্ত্বিক কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার রাত ১০ টা ৩১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে আফগানিস্তানের ফয়জাবাদের ২৮৫ কিলোমিটার পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে ভূপৃষ্ঠের ৭৪ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল। ফয়জাবাদের আশেপাশে গতরাত থেকে কমপক্ষে আরও দুটি ভূমিকম্পের খবর মিলেছে। সেগুলির তীব্রতা চারের ঘরে থাকলেও রাতের ভূমিকম্পের তীব্রতা যথেষ্ট বেশি ছিল। তার ফলে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর, দিল্লি, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব এবং হরিয়ানায় কম্পন অনুভূত হয়েছে। জোরালো কম্পনের পর আতঙ্কে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছেন মানুষ। টুইটারে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিয়োয় জম্মু ও কাশ্মীর, দিল্লি, পঞ্জাবের একাধিক বাড়িতে পাখা, আলো, আসবাবপত্র নড়তে দেখা গিয়েছে। লুধিয়ানা, অমৃতসরেও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তবে আপাতত কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।
প্রাথমিকভাবে জাতীয় ভূতাত্ত্বিক কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছিল, অমৃতসরে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৬.১। পরে সেই ভুল শুধরে নেওয়া হয়। জাতীয় ভূতাত্ত্বিক কেন্দ্রের প্রধান (অপারেশনস) জেএল গৌতম বলেন, ‘হিন্দুকুশ হিমালয়ান এলাকা ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল।যেখানে ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটের সঙ্গে ইউরেশিয়ান প্লেটের ধাক্কা হয়। এটি অত্যন্ত ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং দিল্লি এনসিআরেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাইনি আমরা।’
ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানের লাহোর, ইসলামাবাদ, খাইবার-পাখতুনখাওয়া, পঞ্জাব প্রদেশেও কম্পন অনুভূত হওয়ার খবর মিলেছে। জাতীয় ভূতাত্ত্বিক কেন্দ্রের ভূকম্প বিশেষজ্ঞ এপি পাণ্ডে বলেছেন, ‘ভারতীয় এবং ইউরেশিয়ান প্লেটগুলি যেহেতু ধাক্কা খায়, তাই হিমালয় সবসময় ভূমিকম্পপ্রবণ থাকে। ইউরেশিয়ান প্লেটের দিকে ভূমিকম্প হয়েছে। কিন্তু এটা বেশ জোরালো ভূমিকম্প। কম তীব্রতার একাধিক আফটার শক হতে পারে। তবে যেহেতু উপকেন্দ্র অনেক দূরে, তাই তা আমাদের উপর প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা একেবারেই কম।’
কম্পন অনভূত হওয়ার পর টুইট করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি লেখেন, 'দিল্লিতে কম্পন অনুভূত হয়েছে। প্রত্যেকের সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা করছি।' জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা টুইট করেন, '২০০৫ সালের ভূমিকম্পের পর শ্রীনগরে এত জোরালো কম্পন অনুভূত হয়নি। যা আমায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করেছে। আমি একটি কম্বল নিয়ে দৌড় দিই। আমি ফোন নিতেও ভুলে গিয়েছিলাম। তাই জমি কাঁপার সময় ভূমিকম্প টুইট করতেও পারিনি।'