কর্তব্যে চূড়ান্ত গাফিলতির অভিযোগে দুই কর্মীকে সাসপেন্ড করল পূর্ব-মধ্য রেলের (ইসিআর) সোনপুর শাখা।
তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল, গত শনিবার ১৫২০৪ লখনউ-বারাউনি এক্সপ্রেসের থেকে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনটি পৃথক করার সময় যতটা সতর্কভাবে কাজ করার নিয়ম ছিল, তা তাঁরা পালন করেননি। যার খেসারত প্রাণ দিয়ে চোকাতে হয় অরুণ কুমার নামে এক পয়েন্টসম্যানকে।
সেই ঘটনার প্রেক্ষিতেই অভিযুক্ত দুই রেলকর্মীর বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন ইসিআর-এর এক আধিকারিক।
অভিযুক্ত দুই রেলকর্মী হলেন - পয়েন্টসম্যান মহম্মদ সুলেমান এবং লোকো শান্টার রাকেশ রোশন। তাঁদের দু'জনকেই আপাতত সাসপেন্ড করা হয়েছে। এবং তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
রেলের তরফে জানানো হয়েছে, সুলেমানই লোকো শান্টারকে ভুল সিগন্যাল দিয়েছিলেন। যার জেরে ওই ভয়াবহ ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
শনিবারের সেই ঘটনায় নিহত ৩৫ বছরের অরুণ কুমার সমস্তিপুর জেলার বাসিন্দা ছিলেন। দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে তিনি সংশ্লিষ্ট পার্সেল ভ্যানের কাপলিংগুলি শান্টিং ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তুতি সারছিলেন।
কিন্তু, সেই কাজ সেরে রেললাইন থেকে বেরিয়ে আসার আগেই শান্টিং ইঞ্জিনের লোকা পাইলট ইঞ্জিন পিছিয়ে আনেন। যার জেরে ইঞ্জিন এবং পার্সেল ভ্যানের মাঝখানে আটকে পড়ে বীভৎসভাবে মৃত্যু হয় অরুণের।
এই ঘটনার পর ইসিআর-এর জেনারেল ম্যানেজার একটি তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অনুসারে, সমস্তিপুরের ডিআরএম বিবেক ভূষণ সুড একটি কমিটি গঠন করে দেন এবং ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠান।
রেলের সংশ্লিষ্ট এক আধিকারিক এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, 'প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ওই দিন সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছয় ট্রেনটি। লোকো শান্টার পাইলট রাকেশ রোশন তাঁর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ৮টা ১২ মিনিটে। এবং তিনি ফুয়েল পয়েন্টে পৌঁছন ৮টা ১৫ মিনিটে।'
পয়েন্টসম্যান মহম্মদ সুলেমান একটি বাফার সিগন্যাল (ইঞ্জিন ও কামরার সঙ্গে বাফার কাপলার সংযোগের সিগন্যাল) দেন প্রায় ৮টা ২৭ মিনিটে। এবং এগিয়ে যাওয়ার জন্য হ্যান্ড সিগন্যালও দেন।
এরপর ৮টা ২৯ মিনিট নাগাদ সুলেমান ইঞ্জিন পিছনোর সিগন্যাল দেন এবং তারপরই পিছনের দিকে দৌড়ে এসে সামনে এগোনোর সিগন্যাল দেন।
প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে আরও জানা গিয়েছে, ওই দিন সকাল ১০টা ১৫ মিনিট নাগাদ ইঞ্জিনটিকে কামরা থেকে আলাদা করা হয়। এবং দুর্ঘটনার পর নিহত অরুণের দেহ রেলের ট্র্যাক থেকে সরানো হয় বেলা ১১টা ১০ মিনিট নাগাদ। এবং সেই দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয় দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট নাগাদ।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর অরুণের বৃদ্ধা মা কিরণ দেবীকে ৪৪ লক্ষ ৫২ হাজার টাকার এক্স-গ্রাসদিয়া প্রদান করা হয়েছে। এবং অরুণের ভাইকে একটি চাকরি দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রেল।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলে সরব হয়েছে ইসিআর কর্মী সংগঠন।
তাদের আঞ্চলিক সহ-সভাপতি ঘনশ্যাম পাসওয়ান এই প্রসঙ্গে বলেন, 'যখন ইঞ্জিন আলাদা করা হয়, সেই সময় সেই স্থানে একজন শান্টিং মাস্টারের উপস্থিত থাকার কথা। এবং তাঁরই সমস্ত ঘটনার দায়ভার গ্রহণ করার কথা।'