নাগপুরে হিংসার ঘটনায় এবার সুর চড়ালেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে। তিনি বললেন, 'মহারাষ্ট্রে যদি কেউ ঔরঙ্গজেবকে সমর্থন করে, তাহলে তা সহ্য করা হবে না। ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ, ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজ এবং আমাদের দেশের শত্রু ছিল ঔরঙ্গজেব। সে দেশদ্রোহী ছিল। ও অত্যাচারী হামলাকারী ছিল। সে মা-বোনেদের ওপর অত্যাচার করত। মন্দিরে ভাঙচুর চালাত। ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজের সঙ্গে অন্যায় করেছিল সে।'
এরপর শিবসেনা প্রধান বলেন, 'ঔরঙ্গজেব খুব খারাপ ব্যক্তি ছিল। তাই যেই তাকে সমর্থন করবে, তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। এটা জনতার মত। মহারাজ শিবাজি এবং সম্ভাজির প্রতি মানুষের আবেগ খুবই গভীর। তাই যারা আন্দোলন (ঔরঙ্গজেবের সমাধি সম্ভাজিনগর থেকে সরানোর দাবিতে) করেছেন, তা ন্যায় সঙ্গত। মহারাজ শিবাজির প্রতি প্রেমের থেকে সেই আন্দোলন করা হয়েছে। দেশদ্রোহী ঔরঙ্গজেবের প্রতি মানুষের ক্রোধ রয়েছে। এভাবে পুলিশের ওপর হামলা করা, পেট্রোল বোমা মারা, পাথর ছোড়া, এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। যারা এভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে, যারা হাতে আইন তুলে নেবেন, তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না।'
উল্লেখ্য, ঔরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবি ঘিরে নাগপুরে হিংসা ছড়ায়। জানা যায়, ১৭ মার্চ নাগপুরের মহল এলাকায় পাথর ছোড়া ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপরই নাগপুর পুলিশ শহরে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। হিংসায় জখম হয়েছেন ২৫ পুলিশকর্মী। সঙ্গে জখম হন ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরাও। এই পর্যন্ত হিংসায় জড়িত থাকা সন্দেহে ২০ জনেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে নাগপুরে।
নাগপুরে কী হয়েছিল?
জানা যায়, ঔরঙ্গজেবের কবর অপসারণের দাবিতে একটি ডানপন্থী সংগঠন বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল নাগপুরে। সেই সময় মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র গ্রন্থ পোড়ানো হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মহারাষ্ট্রের নাগপুরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। পরে হিংসা থামাতে গিয়ে ২৫ জন পুলিশকর্মী জখম হন। সঙ্গে জখম হন ফায়ার ব্রিগেড কর্মীরাও। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মধ্য নাগপুরের চিটনিস পার্ক ও মহল এলাকায় উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিকেলে কোতোয়ালি ও গণেশপেঠে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, চিটনিস পার্ক থেকে শুক্রবার তালাও রোড পর্যন্ত এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে দাঙ্গাকারীরা কয়েকটি চার চাকার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর লক্ষ্য করেও পাথর ছোড়া হয় বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। এরপর হাজার হাজার মানুষের ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে অনেক চেষ্টা করতে হয়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিকেলে মহল এলাকায় ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের মূর্তির কাছে বজরং দলের সদস্যরা বিক্ষোভ দেখালে ঝামেলা শুরু হয়। পুলিশ জানায়, আন্দোলন চলাকালে কোরান পোড়ানো হয়েছে বলে গুজব ছড়ায়। পুলিশ সূত্রে খবর, বজরং দলের বিক্ষোভের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেলে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, সন্ধ্যায় গণেশপেঠ থানায় পবিত্র বই পোড়ানোর অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে মহল, কোতোয়ালি, গণেশপেঠ, চিটনিস পার্ক-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন মুসলিম সম্প্রদায়ের বহু মানুষ। গোলমাল আঁচ করতে পেরে পুলিশ টহল জোরদার করে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী ডেকে আনে। এদিকে, চিটনিস পার্ক ও মহল এলাকায় পুলিশকর্মীদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়, এরপরই পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। অন্যান্য এলাকা থেকেও সহিংসতার খবর আসতে শুরু করে। বজরং দলের কর্মীরা অবশ্য কোরান পোড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন যে তারা তাদের প্রতিবাদের অংশ হিসাবে কেবল ঔরঙ্গজেবের একটি কুশপুতুল পোড়িয়েছেন।