ন'বছর পর ঘটে গেল এক ভয়াবহ ও মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি! বৃহস্পতিবার রাতে হাতির হানায় প্রাণ হারান ৬২ বছরের এক বৃদ্ধা। ঘটনাটি ঘটে অসমের তামুলপুর জেলায়। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারের সদস্যদের দাবি, ন'বছর আগে ঠিক একইভাবে প্রাণ গিয়েছিল ওই মহিলার স্বামীরও।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে স্থানীয় ডিএফও প্রদীপ কুমার ভুঁইয়া জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ভারত-ভুটান সীমান্ত লাগোয়া তামুলপুরের নাগরিজুলি এলাকার একটি গ্রামে এক পাল হাতি ঢুকে পড়ে। তারা মূলত খাবারের সন্ধানেই বসত এলাকায় ঢুকেছিল। হাতির পালটি গ্রামের ভিতর যথেষ্ট ভাঙচুর করে। তাতে গ্রামবাসীর মধ্য়ে অনেকেরই আর্থিক ক্ষতি হয়। কারণ, হাতির পাল খাবারের সন্ধানে একাধিক বসত ভিটে ভেঙে দেয়।
ডিএফও বলেন, 'হাতির হামলার পরই গ্রামের মানুষ আমাদের খবর পাঠায়। সেই সময় আমাদের আধিকারিকদের জানানো হয়েছিল, হাতির হামলার সময় অধিকাংশ মানুষই জীবিত অবস্থায় পালাতে সক্ষম হন। কিন্তু, হাতির পাল এলাকায় ছেড়ে চলে যাওয়ার পর যখন আমরা ওই গ্রামে যাই, সেই সময় একটি মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া যায়।'
ঘটনাস্থলে পুলিশের প্রতিনিধিরাও পৌঁছন। যে মহিলার মৃত্যু হয়েছে, তাঁকে তাঁর পরিবারের সদস্যরাই শনাক্ত করেন। তাঁর নাম তারামণি বর্মন। তিনি স্থানীয় একটি চা বাগানের শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, একইভাবে হাতির হামলাতেই তারামণি তাঁর স্বামীকে হারিয়েছিলেন।
পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, 'আমরা লাগাতার এমন হামলার শিকার হয়েই চলেছি। ওঁর (তারামণি বর্মন) স্বামীরও একইভাবে হাতির হামলার ফলে মৃত্যু হয়েছিল। সে প্রায় একদশক আগের ঘটনা। তারপর থেকেই অত্যন্ত অভাবে দিন কাটত তারামণির। আর, এবার ওঁকেও একইভাবে প্রাণ হারাতে হল। এর থেকেই বোঝা যায়, আমরা কতটা সমস্যার মধ্যে রয়েছি।'
ডিএফও জানিয়েছেন, এই গ্রামটি সীমান্তের খুবই কাছে অবস্থিত। এখানকার বনাঞ্চল বেআইনিভাবে দখল করে নেওয়া হয়। দখলদাররা হাতির উপর নানাভাবে হামলা চালান। কখনও আগুন নিয়ে, আবার কখনও বিদ্যুতের তার ব্যবহার করে হাতির উপর আক্রমণ চালানো হয়। এর ফলে হাতিও অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে।
তিনি আরও বলেন, 'এই হাতির পালটি এখানকার নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওরা যে ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করছে, তাতে আমাদের চিন্তা বাড়ছে। আমরা এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে সবরকমভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি।'
ইতিমধ্য়েই নিহত বৃদ্ধার দেহের ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে এবং তারপর দেহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত তিনদিনে এই নিয়ে অসমে এমন চারটি মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।