বেজে গেল বিহারে ভোটের দামামা। ৬ এবং ১১ নভেম্বর হবে বিহার বিধানসভা নির্বাচন হবে। সোমবার এমনটাই ঘোষণা করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।দু’দফা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হবে ১৪ নভেম্বর। নির্বাচনের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ হবে ১৬ নভেম্বর। নীতীশগড়ের ভোটের নির্ঘণ্ট কবে ঘোষণা হবে তা নিয়ে জল্পনা চলছিল গত কয়েকদিন ধরে। অবশেষে আজ বিকেলে তার অবসান হল ৷
বিহারের বর্তমান আইনসভার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২২ নভেম্বর। তার আগেই নির্বাচনের দিন ঘোষণা করলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার ৷ সোমবার দিল্লির বিজ্ঞানভবনে সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই দেশের সমস্ত ভোটারকে ভোজপুরী ভাষায় অভিনন্দন জানান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। বিহারের সব ভোটারের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'রাজ্যের ছটপুজো-সহ যেমন ভাবে আমরা সব উৎসবকে পালন করেন। ভোটের দিনও সেভাবে উৎসবের মতো করে পালন করুন।' এরপরেই জ্ঞানেশ কুমার জানান, ২৪৩ আসনের বিহারে দু’দফায় বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে ১২১টি আসনে প্রথম দফায় নির্বাচন হবে ৬ নভেম্বর। বাকি ১২২টি আসনে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন হবে ১১ নভেম্বর। প্রথম দফায় মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে ১০ অক্টোবর থেকে, মনোনয়ন জমার শেষ তারিখ ১৭ অক্টোবর, মনোনয়ন প্রত্যাহারের চূড়ান্ত সময়সীমা ২০ অক্টোবর। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে ১৩ অক্টোবর থেকে মনোনয়ন জমার শেষ তারিখ ২০ অক্টোবর, মনোনয়ন প্রত্যাহারের চূড়ান্ত সময়সীমা ২৩ অক্টোবর। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, বিহারে ৭.৪৩ কোটি ভোটার রয়েছে, যার মধ্যে ৩.৯২ কোটি পুরুষ ভোটার এবং ৩.৫১ জন মহিলা ভোটার। রাজ্যে ১৪ লক্ষ নতুন ভোটার রয়েছেন। জ্ঞানেশ কুমার আরও জানিয়েছেন, বিহারে মোট ৯০,৭১২ জন বিএলও, ২৪৩ জন ইআরও এবং ৩৮ জন ডিইও নিয়োগ করা হয়েছে, যাদের সঙ্গে এখন সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে।
ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বলেন, নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করবে যে বিহার নির্বাচন সবচেয়ে স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ভোটারদের জন্য সুবিধাজনক হবে এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। বিহারে মোট ৯০,৭১২টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে যেখানে একটি হেল্প ডেস্ক এবং ওয়েবকাস্টিং সুবিধা থাকবে। ভোটের সময় জিরো টলারেন্স, সাফ বার্তা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত সিএপিএফ মোতায়েন করা হবে। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে জ্ঞানেশ কুমার জানান, বিহার নির্বাচনের জন্য ১৭টি নতুন উদ্যোগ চালু করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বুথ-স্তরের এজেন্ট, পুলিশ অফিসারদের প্রশিক্ষণ, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর), কর্মকর্তাদের জন্য বর্ধিত বেতন। তাঁর কথায়, 'এবার বিহারে ৯০ হাজারের বেশি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোটদানের আগে মোবাইল রেখে ভিতরে যেতে হবে। এর পরীক্ষা আমরা আগে করেছি। এবার গোটা বিহারে তা প্রয়োগ করা হবে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে কমিশন বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করছে। লম্বা লাইন যাতে হতে না পারে, তার জন্য আমরা এবার গোটা দেশে বুথপ্রতি ১২০০ ভোটার সংখ্যা রাখা হচ্ছে।'
বিহারের এসআইআর এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর ভোটচুরি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মুখ্য কমিশনার বলেন, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে প্রতিটি ভোটের আগে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনের আইনি স্বীকৃতি আছে। ফলে কারও অভিযোগই সত্য নয়। যাঁদের নাম নিয়ে আপত্তি ছিল, তাঁদের সময় দেওয়া হয়েছিল ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু, সেরকম কোনও আপত্তি আসেনি।বলে রাখা ভালো, ভোট ঘোষণার আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার, নির্বাচন কমিশনার সুখবীর সিং সান্ধু এবং বিবেক যোশীর শনিবার ও রবিবার দু'দিনের বিহার সফর করেন ৷ বিহারে আগামী ২২ নভেম্বর, ২০২৫-এ বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মোট ২৪৩টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই আসনগুলির মধ্যে তফসিলি উপজাতিদের (এসটি) জন্য দুটি এবং তফসিলি জাতিদের (এসসি) জন্য ৩৮টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। রাজ্যের ক্ষমতাসীন জেডিইউ-বিজেপি জোট এবার বিরোধী আরজেডি এবং কংগ্রেস-এর নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন-এর কাছ থেকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।