'ভূতুড়ে' ভোটার নিয়ে বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের লাগাতার আক্রমণ এবং তাতে অন্যান্য অবিজেপি রাজনৈতিক দলের জোরালো সমর্থন, আর তার জেরে দেশজুড়ে শুরু হওয়া আলোচনা ও সমালোচনা - এই প্রেক্ষাপটে এবার ভোটার কার্ড বা এপিক কার্ড-এর সঙ্গে আধার কার্ডের সংযুক্তিকরণ করার বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী মঙ্গলবারই (১৮ মার্চ, ২০২৫) এই বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসছে তারা। শোনা যাচ্ছে, এই বৈঠক ডেকেছেন স্বয়ং মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন - কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব, আধার কমিশনের সিইও, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের সচিব এবং কেন্দ্রীয় আইন সচিব।
একইসঙ্গে, এই বিষয়ে সমস্ত (জাতীয় ও আঞ্চলিক) রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পরামর্শ ও মতামত চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলিকে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তাদের এই মতামত ও পরামর্শ জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, ভূতুড়ে ভোটার নিয়ে যে হারে জলঘোলা হয়েছে এবং হচ্ছে, তাতে নিঃসন্দেহে নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই প্রেক্ষাপটে খানিকটা বাধ্য হয়েই কি তবে আধারের সঙ্গে এপিক কার্ড বা ভোটার কার্ডের সংযুক্তিকরণ ঘটাতে চাইছে তারা?
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত দলীয় কর্মসূচির মঞ্চ থেকে সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রীতিমতো তথ্য প্রমাণ-সহ দেখিয়ে দিয়েছিলেন, কীভাবে একই এপিক নম্বরের ভিন্ন ভিন্ন এলাকা ও রাজ্যের ভোটারের নাম রয়েছে!
প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশন এক আজব যুক্তি খাড়া করে বিষয়টিকে হালকা করার একটা চেষ্টা করেছিল বটে। তাদের দাবি ছিল, এমনটা হতেই পারে এবং তাতে নাকি কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু, সেই যুক্তি ধোপে টেঁকেনি। যার ফলে পরবর্তীতে বাধ্য হয়েই নির্বাচন কমিশন জানায়, এটি একটি ত্রুটি এবং আগামী তিনমাসের মধ্যে এই ত্রুটি সংশোধন করে নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের দফতরে গিয়ে এই বিষয়ে তাদের একাধিক অভিযোগ তুলে ধরে। জানতে চাওয়া হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার আগে পর্যন্ত কেন এই ত্রুটি সংশোধনের কোনও চেষ্টা করেনি নির্বাচন কমিশন। এর পাশাপাশি, জানতে চাওয়া হয়, যদি আধার কার্ড, প্যান কার্ড, পাসপোর্টের ভিন্ন ভিন্ন 'ইউনিক নাম্বার' থাকতে পারে, তাহলে এপিক কার্ডের ক্ষেত্রে কেন তার ব্যতিক্রম হবে।
এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন আধার কার্ডের সঙ্গে এপিক কার্ডের সংযুক্তিকরণ করতে চেয়ে বৈঠক ডাকায় স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহলের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবারের বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নজর রয়েছে সেদিকে।