সম্প্রতি ফের একবার মাঝ আকাশে ভেঙে পড়ে ইলন মাস্কের রকেট। পরে নিজের সংস্থার রকেট ভেঙে পড়ার ঘটনা নিয়ে পোস্ট করে ঠাট্টার সুরে ইলন মাস্ক লেখেন, 'বিনোদোনের গ্যারান্টি আছে এখানে'। অবশ্য ঠাট্টা করলেও রকেটের 'রোগ' নিয়েও যে মাস্ক চিন্তায় ছিলেন, তা বলাই বাহুল্য। এই আবহে রকেট ভেঙে পড়ার কারণ খুঁজে বের করল স্পেসএক্স। এবং সেই কারণ নিয়ে নিজেই আপডেট দিলেন বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি। জানালেন, রকেটের অক্সিজেন বা জ্বালানি ট্যাঙ্কে লিক ছিল।
এই নিয়ে একটি পোস্ট করে ইলন মাস্ক লেখেন, 'প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে আমাদের রকেটের অক্সিজেন অথবা জ্বালানি লিক করেছিল। মহাকাশযানের ইঞ্জিন ফায়ারওয়ালের ওপরে থাকা ফাঁকে এই এই লিক ছিল। এই লিকটা এতটাই বড় ছিল যে তাতে অনেকটা প্রেশার তৈরি হয়। রকেটের ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে যায় সেই চাপ। এরপর থেকে আমরা লিক নিয়ে সচেতন থাকতে অবশ্যই দু'বার পরীক্ষা করব। আমরা ফায়ার সাপ্রেশন ব্যবস্থা কার্যকর করব। আমরা ভেন্ট এরিয়া বাড়াব। এই সব করার জন্যে পরের মাসের পরবর্তী লঞ্চ পিছোতে হবে বলে মনে হয় না।'
উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৩৮ মিনিটে টেক্সাসের বোকা চিকা উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে স্টারশিপ রকেট শূন্যে পাঠায় স্পেসএক্স। সেই রকেট লঞ্চে ব্যবহৃত বুস্টারটি লঞ্চপ্যাডে ফিরে আসে এবং সেটিকে 'ক্যাচ' করা হয়। তবে মহাকাশের দিকে ছুটে যাওয়া রকেটটি ধ্বংস হয়ে যায়। স্পেসএক্সের এই ধরনের সপ্তম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ ছিল এটি। আর চলতি বছরের প্রথম এহেন পরীক্ষামূলক পরীক্ষা ছিল এটি। ১৬ জানুয়ারি হিসেব মতোই মহাকাশের উদ্দেশে উড়ে যাওয়ার পর এক পর্যায়ে স্টারশিপ রকেটটি বুস্টারের থেকে আলাদা হয়ে যায়। তখন রকেটের সুপার হেভি বুস্টারটি ফিরে আসে স্পেস এক্সের সেই টাওয়ারে। এর আগে এই রকেটের পরীক্ষা চালানো হয়েছিল গত ২০২৪ সালের নভেম্বর, অক্টোবর, জুন এবং মার্চ ও ২০২৩ সালের এপ্রিল ও নভেম্বরে। প্রসঙ্গত, অন্য গ্রহে মানুষের বসতি স্থাপনের জন্যে এই স্টারশিপ রকেট প্রকল্প চালাচ্ছেন মাস্ক।
স্পেসএক্সের কমিউনিকেশনস ম্যানেজার ড্যান হুট লাইভ স্ট্রিমিংয়ের সময় বলেন, লঞ্চের প্রথম পর্যায়ের সুপার হেভি বুস্টারের থেকে মহাকাশে পৃথক হওয়ার আট মিনিটের মধ্যে স্টারশিপের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে টেক্সাসের স্পেসএক্স মিশন কন্ট্রোলের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'আমাদের আপার স্টেজে যে সমস্যা আছে, তা বোঝা যাচ্ছে।' এদিকে মহাকাশে স্টারশিপ ভেঙে পড়লে দেখা যায় মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষ আগুনের উল্কার মতো মাটির দিকে ধেয়ে আসছে। সেই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। এই নিয়ে নিজেই পোস্ট করেছেন স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্ক। সেখানে নিজের রকেট ভেঙে পড়ার ভিডিয়ো পোস্ট করে তিনি লেখেন, 'সাফল্য নিশ্চিত নয়, তবে বিনিদোন যে মিলবে, তা নিশ্চিত।'
এদিকে দ্বিতীয়বারের মতো স্পেসএক্স তাদের বুস্টার ক্যাচ সম্পন্ন করে। এর আগে গতবছর অক্টোবরে এই কাজ করেছিল স্পেসএক্স। আর গতকালও ইলন মাস্কের সংস্থা অভাবনীয় এক ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতা প্রদর্শন করল। স্টারশিপ রকেটের এক উড়ন্ত বুস্টারকে 'ক্যাচ' করল লঞ্চপ্যাড। লঞ্চের সময় যেই হাতলে রকেটটাকে ধরে রাখা হয়, সেই হাতলই নীচে নামতে থাকা বুস্টারকে নিখুঁত ভাবে ক্যাচ করে। স্পেসএক্সের এই প্রযুক্তি আসার পরই লঞ্চপ্যাডেই বুস্টার ধরা হচ্ছে অক্ষত ভাবে। নয়ত সাধারণত এই বুস্টারগুলিকে সমুদ্রে অবতরণ করানো হয়। স্পেস এক্স বিগত ৯ বছর ধরে রকেট লঞ্চের সময় এভাবেই সমুদ্রে বুস্টার অবতরণ করিয়ে এসেছে। পরে তারা সেখান থেকে বুস্টারগুলিকে ফের তুলে নিয়ে আসত। উল্লেখ্য, স্টারশিপ রকেট ১০০ টন ওজনের যন্ত্রপাতি বা ১০০ জন নভোশ্চরকে বহন করতে পারে। এই সুপার হেভি বুস্টারে আছে ৩৩টি ইঞ্জিন।