পায়ে শিকল বাঁধা। হাতে পরানো হাতকড়া। সেই অবস্থায় আমেরিকা তাঁদের ফেরত পাঠিয়েছে বলে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ ভারতীয়রা। অভিযোগ করেছেন যে দীর্ঘ বিমানযাত্রার পুরোটা তাঁদের ওরকমভাবেই থাকতে হয়েছিল। সেই অমানবিক আচরণের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় বিবৃতি দিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর বললেন, ‘যে অভিবাসীদের ফেরানো হচ্ছে, তাঁদের সঙ্গে যাতে কোনওরকম দুর্ব্যবহার না করা হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা আমেরিকা সরকারের সঙ্গে কথা বলছি।’
পায়ে চেন বেঁধে পাঠানোর ভিডিয়ো গর্বের সঙ্গে প্রকাশ আমেরিকার
সেই আলোচনার ফলে কোনও লাভ হবে কিনা, সেটা সময়ই বলবে। কিন্তু আপাতত রীতিমতো গর্বের সঙ্গে ভারতীয় অভিবাসীদের পায়ে চেন বাঁধানোর ভিডিয়ো শেয়ার করেছে মার্কিন প্রশাসন। আমেরিকার সীমান্ত নজরদারি বাহিনীর প্রধান মাইকেল ব্যাঙ্কসের পোস্ট করা ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে যে পায়ে চেন বেঁধে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের মার্কিন বায়ুসেনার সি-১৭ বিমানে ওঠানো হচ্ছে। হাত সামনের দিকে রাখা আছে। হাতকড়া পরানো ছিল কিনা, তা ওই ভিডিয়ো থেকে ঠিক স্পষ্ট বোঝা যায়নি।
ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ভারতে ফেরা ব্যক্তিদের
বুধবার আরও ১০৩ জন অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে অমৃতসর বিমানবন্দরে নামা পঞ্জাবের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, ‘আমাদের হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। পায়ে শিকল বাঁধা ছিল। পুরো যাত্রার সময় সেরকম ছিল। অমৃতসর বিমানবন্দরে তা খোলা হয়।’ ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিমানে ফেরা এক অবৈধ অভিবাসী জানিয়েছেন যে আমেরিকায় যেতে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন এজেন্টকে। কেউ-কেউ আরও বেশি টাকা দিয়েছিলেন। তাঁরা নিঃস্ব হয়ে গিয়েছেন।
এজেন্টদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ, হুংকার জয়শংকরের
আর সেই পরিস্থিতিতে এরকম এজেন্টদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘এরকম বেআইনিভাবে (অন্য দেশে) লোকজনকে পাঠানোর ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার উপরে আমাদের জোর দেওয়া উচিত। যে অবৈধ অভিবাসীরা ফিরে এসেছেন, তাঁরা যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে এরকম এজেন্ট এবং এরকম এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করা হবে।’
সেইসঙ্গে ভারতের বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিমানের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরানোর যে নিয়ম আছে, তাতে বিধিনিষেধের ব্যাপার আছে। তবে আমেরিকার তরফে জানানো হয়েছে যে মহিলা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে সেরকম কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। সেইসঙ্গে অবৈধ অভিবাসীদের খাবার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হয়। প্রয়োজনে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। শৌচাগারে গেলে অবৈধ অভিবাসীদের উপরে কোনও বাধানিষেধ চাপানো হয় না। বুধবার যে বিমান এসেছে, তাতে যাবতীয় নিয়ম পালন করা হয়েছে বলে আমেরিকার তরফে দাবি করা হয়েছে।