ফায়ার সার্ভিসের (দমকল) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন৷ ঢাকার আগুন-সহ নানা দুর্ঘটনায় কার, কী দায়-দায়িত্ব তা নিয়ে কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে৷ বলেছেন সমস্যার কথাও৷
মগবাজারের ঘটনায় তো অনেকের প্রাণ গেল৷ বলা হচ্ছে গ্যাস থেকে দুর্ঘটনা৷ এর দায় কার?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন: জটিল প্রশ্ন করেছেন৷ এখানে ভবন মালিক আছেন৷ যাঁরা ইউটিলিটি সেবা দেন, তাঁরাও আছেন৷ নগর ব্যবস্থাপনা যাঁরা করেন, তাঁদেরও দায়িত্ব আছে৷ আমাদেরও দায়িত্ব আছে৷ একজনের ওপর দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া যায় না৷
নিমতলী, চুড়িহাট্টায় দেখা গেছে কেমিকেল গোডাউন থেকে আগুন লেগে অনেকে মারা গিয়েছেন৷ এখন কি পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে?
না, এখনও একই অবস্থায় আছে৷ তবে সরকারের পরিকল্পনা আছে কেমিকেল গোডাউন সরিয়ে নেওয়ার৷ দুটি গোডাউনের কাজ চলছে৷ একটি শ্যামপুরে এবং অপরটি টঙ্গিতে৷ করোনা না থাকলে এরইমধ্যে কাজ শেষ হয়ে যেত৷ আশা করছি এক বছরের মধ্যে শেষ হবে৷ তখন কেমিকেল গোডাউনগুলি সরিয়ে নেওয়া হবে৷ এখন আমরা চেষ্টা করছি যাতে আর কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে৷
গুলশান-সহ বড় বড় আগুনের ঘটনায় দেখেছি ভবনগুলোতে ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম নেই৷ থাকলেও কাজ করে না..
বিল্ডিং কোড হয়েছে ২০০৬ সালে৷ অনেক ভবনই পুরনো৷ ফলে ওইসব ভবনে ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম নেই বা মানসম্পন্ন নয়৷ হাজার হাজার ভবন৷ তাদের আমরা পরামর্শ দিচ্ছি যাতে ভবনগুলোর উন্নয়ন করা হয়৷ আর জাপান সরকারের সহায়তায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যাতে ২০৭০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সব ভবন ভূমিকম্প সহনীয় করা যায়৷ সেখানে ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থারও উন্নয়ন হবে৷
ঢাকার ভবনগুলি কি বড় ধরনের ভূমিকম্প সামলাতে পারবে?
ঢাকা শহরের যেসব ভবন পুরনো সেগুলো ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে আছে৷ নতুন যেগুলো হচ্ছে সেগুলোর অবস্থা ভালো৷ তবে আশার কথা হলো বাংলাদেশে ভূমিকম্পের যে তিনটি কেন্দ্র তার মধ্যে ঢাকা শহর নাই৷
ভবন নির্মাণে তো ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নিতে হয়..
ফায়ার সার্ভিস ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম ঠিক আছে কিনা তা দেখে৷ তার অনুমতি দেয়৷ কিন্তু পুরো ভবনটির অনুমতি দেয় রাজউক৷ এমনকি অকুপেন্সি সার্টিফিকেটও দেয় রাজউক৷ আমরা শুধু অগ্নি-নিরাপত্তা ছাড়পত্র দিই৷
অগ্নি-নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়া ভবন নির্মাণের সুযোগ কি আছে?
না নেই৷ তবে রাজউককে ম্যানেজ করে কেউ যদি অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিতে পারে তাহলে তো ভবন বানাতে পারে৷ তবে অগ্নি নিরাপত্তা ছাড়পত্র না থাকলে ইউটিলিটি কানেকশন পাওয়ার কথা না৷
আপনারা বছরে কতগুলো অগ্নি-মহড়া করেন? আপনাদের জনবল কি পর্যাপ্ত?
আমরা বছরে হাজারেরও বেশি মহড়া করি৷ আমরা করি স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে৷ আর সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা আছে, তারাও করে৷ জনবল পর্যাপ্ত আছে কিনা তা তো আপেক্ষিক৷ তবে আগের চেয়ে জনবল এখন বেশি৷
ঢাকায় কোথাও আগুন নেভাতে গিয়ে আপনারা কোন ধরনের সমস্যায় বেশি পড়েন?
প্রধানত তিন ধরনের সমস্যায় আমরা পড়ি৷ প্রথমত, ঘটনাস্থলে পৌঁছানো৷ ট্র্যাফিক জ্যাম ও সরু রাস্তার কারণে আমাদের যেতে দেরি হয়৷ দ্বিতীয়ত, জলের উৎস৷ ঢাকা শহরে পানির উৎস খুবই কম৷ তবে আমাদের জলের উৎসের ম্যাপ আছে৷ আমরা সেটা দেখে পানির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি৷ তৃতীয়ত, উৎসুক জনতা৷ শত-শত উৎসুক জনতাকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে৷ তাদের সামলাতে আমাদের মোট ১০০ সদস্যের তিনটি টিম আছে৷ তবে তা পর্যাপ্ত নয়৷
নাগরিকরা এসি-সহ নানা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করেন৷ সেখান থেকেও আগুন লাগে৷ তাদের কী করণীয়?
অনেকে অতি দাহ্য জিনিসপত্র দিয়ে ঘর ডেকরেশন করেন৷ এটা করা যাবেনা৷ মানসম্মত ইলেট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে৷ কম দামে পেলেই তা ব্যবহার করা যাবেনা৷ আর বিদ্যুৎ ও গ্যাসহ বিভিন্ন ধরনের ইউটিলিটি লাইন নিয়মিত সার্ভিসিং ও মেইনটেনেন্স করতে হবে৷ মেইনটেনেন্স ফার্স্ট৷