বিগত দিনে বিচারপতি নিয়োগে কলেজিয়াম ব্যবস্থার বিরোধিতায় সর্বসমক্ষে নিজের মত প্রকাশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। এই আবহে এবার মুখ খুললেন দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত। উল্লেখ্য, নিজের কার্যকালে কোনও বিচারপতি নিয়োগ করতে পারেননি প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত। কলেজিয়ামের মতানৈক্যের কারণেই বিচারপতি নিয়োগ সম্ভব হয়নি। এরই মাঝে কলেজিয়াম নিয়ে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর মন্তব্য বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই আবহে রিজিজুর মন্তব্য প্রসঙ্গে ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’ ওয়েবসাইটকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচরতি বলেন, ‘কলেজিয়াম প্রতিষ্ঠিত আদর্শ এবং তাঁর (কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী) মন্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। কলেজিয়াম পদ্ধতি সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের অনুমোদন পেয়েছে।’
প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কলেজিয়াম সিস্টেম ফুলপ্রুফ। এই ব্যবস্থা থাকবে। কলেজিয়ামের বিচারপতিরা প্রায়শই অন্য রাজ্য থেকে বিচারক নির্বাচন করেন। তারপরে আইবি রিপোর্ট আছে, তারপর এসসি কলেজিয়াম এটি দেখে... তাই যথেষ্ট চেক এবং ব্যালেন্স রয়েছে। বাইরে থেকে যদি কোনও হাই কোর্টে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়, তাহলে তা নিশ্চিত করে যে তিনি শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতেই কাজ করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সমস্ত কলেজিয়াম সদস্য নিজেদের বক্তব্য ও ইনপুট আছে এবং তাঁরা তা পেশ করে থাকেন। এই কারণেই আমরা প্রাক্তন প্রধান বিচারতি রমনার নেতৃত্বে প্রায় ২৫০ জন বিচারক নিয়োগ করেছিলাম।’ এদিকে কলেজিয়ামের কাজের স্বচ্ছতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘টিকার তথ্য সংগ্রহের মতো না হলেও কলেজিয়ামের সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা রয়েছে।’
এর আগে আরএসএস-র প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা 'পাঞ্চজন্য'র আয়োজিত 'সবরমতি সংবাদ' নামক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে রিজিজু বলেন, ‘আমি দেখেছি যে বিচারকদের নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অর্ধেক সময় ব্যস্ত থাকেন বিচারপতিরা। এর কারণে তাঁদের প্রাথমিক কাজ - ন্যায়বিচার প্রদান ব্যাহত হয়। ভারত ছাড়া বিশ্বের কোথাও এমন প্রথা নেই যে বিচারকরা তাদের ভাইদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ করছেন। দেশের মানুষ কলেজিয়াম পদ্ধতিতে খুশি নয় এবং সংবিধানের চেতনা অনুযায়ী বিচারক নিয়োগ করা সরকারের কাজ।’
বর্তমান কলেজিয়াম ব্যবস্থার বিরোধিতায় আইনমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, ‘১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ করেই আইন মন্ত্রণালয় দেশের প্রতিটি বিচারককে নিয়োগ করত। তখন আমাদের অনেক নামকরা বিচারক ছিলেন। এ বিষয়ে সংবিধান স্পষ্ট। এতে বলা হয়েছে যে ভারতের রাষ্ট্রপতি বিচারক নিয়োগ করবেন। তার মানে আইন মন্ত্রণালয় ভারতের প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ করে বিচারক নিয়োগ করবে। জনগণ নেতাদের মধ্যে রাজনীতি দেখতে পায়, কিন্তু বিচার বিভাগের ভেতরে যে রাজনীতি চলছে তা তারা জানে না।’