সাসপেন্ডেড ভারতীয় জনতা পার্টির মুখপাত্র নুপুর শর্মাকে নিয়ে সাম্প্রতিক মন্তব্যের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট ‘লক্ষ্মণ রেখা’ ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করে সোমবার একটি খোলা চিঠি লিখলেন হাইকোর্টের ১৫ জন প্রাক্তন বিচারপতি, বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা এবং প্রাক্তন সেনা কর্তারা। ১১৭ জনের স্বাক্ষরিত চিঠিতে লেখা হয়, ‘বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই ধরনের দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য আগে আর কখনও করা হয়নি এবং এটি বৃহত্তম গণতন্ত্রের বিচার ব্যবস্থায় অমার্জনীয় দাগ। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে এবং দেশের নিরাপত্তার ওপর সম্ভাব্য গুরুতর প্রভাব যাতে না পরে, তার জন্য জরুরি সংশোধনী পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হচ্ছে।’
চিঠির স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন বম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ক্ষিতিজ ব্যাস, গৌহাটি হাইকোর্টের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে শ্রীধর রাও, দিল্লি হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এসএন ধিংরা এবং বিভিন্ন হাইকোর্টের অন্যান্য প্রাক্তন বিচারপতিরা। এছাড়াও ৭৭ জন আমলা (প্রাক্তন মুখ্য সচিব, রাষ্ট্রদূত এবং ডিজিপি) এবং ২৫ জন প্রাক্তন সেনা কর্তা।
এর আগে শীর্ষ আদালত নূপুর শর্মাকে বলেছিল, ‘দেশে যা যা ঘটছে তার জন্য একক ভাবে দায়ী’ তিনি। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, টিভিতে এসে সারা দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত নূপুর শর্মার। নূপুরের প্রাণ সংশয় ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘তিনি হুমকির মুখে পড়ছেন, না কি তিনিই নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছেন? তিনি দেশে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করেছেন। আজ গোটা দেশে যা চলছে, তার পিছনে দায়ী একা এই মহিলা।’ এদিকে মৌখিক পর্যবেক্ষণে তুলোধনা করা হলেও সুপ্রিম কোর্টে নূপুর শর্মার মামলায় রায়ের যে কপি আপলোড করা হয়েছে, তাতে সেরকম কোনও শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। মাত্র চার লাইনের রায়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, বিজেপির প্রাক্তন মুখপাত্রের আর্জি খারিজ করে দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেই সব অভিযোগ একত্রিত করে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করার আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নূপুর শর্মা। তিনি আবেদন জানিয়ে দাবি করেন, তাঁর প্রাণ সংশয় রয়েছে। তবে নূপুরের আর্জি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট বিজেপির প্রাক্তন মুখপাত্র নুপুর শর্মাকে তিরস্কার করে বলে, নূপুরের ‘বেলাগাম মুখের কারণে দেশে আগুন লেগেছে। উদয়পুরের মতো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য দায়ী’ তিনি। আর্জি খারিজ প্রসঙ্গে শীর্ষ আদালত বলে, ‘এই পিটিশনে তাঁর ঔদ্ধত্য ঠিকরে বেরোচ্ছে, যেন দেশের ম্যাজিস্ট্রেটরা তাঁর কাছে খুবই ছোটো।’ সুপ্রিম কোর্টের এই বাক্যবাণের বিরুদ্ধে এবার খোলা চিঠি লিখলেন প্রাক্তন আমলা ও বিচারপতিরা।