সেই ২০২০ সাল থেকেই লাদাখে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে ঝামেলা। এরই মাঝে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে নানান কায়দায় নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, বাংলাদেশ, ভুটানের মতো দেশের ওপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চিন। আর এই সবের মাঝেই আবার সম্প্রতি ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপে নির্বাচিত হয়ে এসেছে চিন ঘনিষ্ঠ সরকার। শ্রীলঙ্কায় নিজেদের গুপ্তচর চাহাজ দাঁড় করাতে না পারা চিন মলদ্বীপে নিজেদের গুপ্তচর জাহাজ নিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে পড়শিদের মাধ্যমেই ভারতকে ঘিরে ফেলার নিঁখুত পরিকল্পনা যেন করে রেখেছে চিন। আর এই কথাটাই অকপটে স্বীকার করলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। এর আগে একাধিকবার এই জয়শংকরই বলে এসেছেন, সীমান্তের পরিস্থিতি ঠিক না হলে ভারত-চিন সম্পর্কের সার্বিক উন্নতি সম্ভব নয়। আর এই তিনিই এবার বললেন, ভারতের পড়শি দেশগুলির ওপর নিজেদের প্রভাব চিন খাটাবেই। তবে এই ধরনের প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে ভয় পেলে চলবে না।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার আইআইএম মুম্বইতে পড়ুয়াদের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছিলেন জয়শংকর। সেখানেই তাঁকে মলদ্বীপের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্ক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেই সময় জয়শংকর বলেন, 'প্রতিটি প্রতিবেশী অঞ্চলেই সমস্যা রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত পড়শিদেরই পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে অন্য দেশের।' বিদেশমন্ত্রী এরপর আরও বলেন, 'এই অঞ্চলে চিনের প্রভাব বিস্তারের একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তবে তা যে ভারতীয় কূটনীতির ব্যর্থতা, তা বলা ঠিক হবে না।'
জয়শংকরের কথায়, 'আমাদের এটা ভুলে গেলে চলবে না, চিনও ভারতের প্রতিবেশী দেশ। তাই আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিতে তারা লিপ্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। এবং এর ফলে তারা আমাদের পড়শি দেশে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইবে। তবে এর মানে এই নয় যে আমরা চিনকে ভয় পাব। আমার মনে হয়, ভারতের বলা উচিত, এটা একটা প্রতিযোগিতামূলক খেলা মাত্র। চিন নিজের সেরাটা দিক, আমরাও আমাদের সেরাটা দেব।' এরপর চিনের শক্তি সম্পর্কে জয়শংকর বলেন, 'বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চিন নিজের সব রিসোর্সকে কাজে লাগাবে এবং সেভাবেই পরিস্থিতিতে নিজেদের ধাঁচে সাজানোর চেষ্টা করবে। চিনকে নিয়ে আমাদের অন্য মনোভাব রাখাও ঠিক না। তবে চিন যা করছে, তা নিয়ে আমরা অভিযোগ করব না। আমাদের এই প্রতিযোগিতাকে ভয় পেলে চলবে না। এই প্রতিযোগিতাকে স্বাগত জানিয়ে আমাদেরও এগিয়ে যাওয়া উচিত।'
এদিকে গভীর সঙ্কটে থাকা শ্রীলঙ্কাকে সাহায্যের উদাহরণ তুলে ধরেন জয়শংকর। আর বর্তমান মলদ্বীপ সরকারের 'ইন্ডিয়া আউট' নীতি প্রসঙ্গে জয়শংকর বলেন, 'ভারতের বিদেশ নীতির ওপর ভরসা রাখা উচিত দেশবাসীর। সব দেশেরই তাদের পড়শিদের সঙ্গে কিছু কিছু সমস্যা থাকে। সবকিছু একদম ঠিকঠাক কখনও থাকে না। সমস্যা থাকবেই। আমাদের কাজ হল সেই সমস্যার বিষয়ে আগেভাগে আন্দাজ করা, পরিস্থিতির বিবেচনা করে পদক্ষেপ করা। দিনের শেষে পড়শিদের সঙ্গে সম্পর্ক তো বজায় রাখতেই হবে। রাজনীতিতে অনেক সময়ই কঠিন অবস্থান গ্রহণ করা হয়। তবে কূটনীতিতে কঠোর অবস্থানের কোনও স্থান নেই। ইতিহাস এবং ভুগোল খুব শক্তিশালী দু'টি বিষয়। এটা থেকে পালানো যাবে না। পড়শি দেশগুলির একে অপরকে লাগবেই।'