দীক্ষা ভরদ্বাজ
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ‘ব্যর্থ’ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইস্তফার দাবি তোলা হচ্ছিল। ব্যবহার করা হচ্ছিল ‘রিজাইন মোদী’ (পদত্যাগ করুন মোদী) হ্যাশট্যাগ। সেই হ্যাশট্যাগ সাময়িকভাবে ব্লক করে দেওয়ায় তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েছিল ফেসবুক। তা নিয়ে এবার সাফাই দিল সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা।
ফেসবুকের এক মুখপাত্র বলেন, ‘ভারত সরকারের নির্দেশে নয়, আমরা ভুলবশত সাময়িকভাবে ওই হ্যাশট্যাগ ব্লক করে দিয়েছিলাম। তাই আবারও ব্লক প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’ তাতে অবশ্য সমালোচনার বহর কমেনি। বরং টুইটারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই।
গত কয়েকদিন ধরে ভারতে লাগামহীনভাবে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বৃহস্পতিবারও দৈনিক আক্রান্ত এবং প্রাণহানির নিরিখে রেকর্ড তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭৯,২৫৭ জন নয়া করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। ওই সময়ের মধ্যে করোনায় ৩,৬৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা দৈনিক মৃত্যুর নিরিখে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। সেইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় মৃতদেহ সৎকার, অক্সিজেনের আকালের ভয়াবহ ছবি-ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। তা নিয়ে একাংশের তোপের মুখে পড়েছে মোদী সরকার। তার রেশ ধরেই ‘রিজাইন মোদী’ ট্যাগ ব্যবহার করছিলেন অনেকে।
এমনিতেই সপ্তাহখানেক আগে করোনা নিয়ে 'উস্কানিমূলক পোস্ট'-এর জন্য বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলিকে ১০০-এর বেশি পোস্ট এবং অ্যাকাউন্ট সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। নাম গোপন রাখার শর্তে এক কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক বলেছিলেন, ‘যে করোনা সংক্রান্ত পোস্টে সৎকারের ছবি দেখানো হয়েছে, যা হিংসাত্মক এবং উস্কানিমূলক বার্তা দিচ্ছে। যা জনগণকে প্ররোচনা দিতে পারে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর হামলার কারণ হয়ে উঠতে পারে, তা ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।’
'হিন্দুস্তান টাইমস' জানতে পেরেছিল, ‘বাংলার গর্ব মমতা’-র ফেসবুক পেজও সেই তালিকায় আছে। যা ভেরিফায়েড পেজ তো বটেই। সঙ্গে ২৭ লাখ ফলোয়ার্স আছে। ফেসবুকের তরফে পেজের অ্যাডমিনকে কোনও নোটিশ দেওয়া হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯ (এ) ধারায় ব্লক করে দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্র। শনিবার থেকে সেই পুরো নির্দেশ কার্যকর হয়েছে। এক আধিকারিক বলেছিলেন, ‘ব্লক করে দেওয়ার নির্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী হ্যান্ডেলও আছে।’ সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘ভুয়ো তথ্যের জন্য সেই নির্দেশ জারি করা হয়েছে।’
‘বাংলার গর্ব মমতা’-র ফেসবুক পেজের পাশাপাশি টুইটারে কংগ্রেসের সাংসদ রেভন্ত রেড্ডি, তৃণমূলের নেতা তথা বিদায়ী মন্ত্রী মলয় ঘটক, দুই সিনেমা নির্মাতা বিনোদ কাপরি ও অবিনাশ দাস এবং 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থক'-দের অ্যাকাউন্টও আছে। সেইসব অ্যাকাউন্টের যে পোস্টগুলি নিয়ে আপত্তি তুলেছিল কেন্দ্র, তা ব্লক করে দিয়েছে টুইটার ইন্ডিয়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আধিকারিক জানিয়েছিলেন, ৫২ টি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে টুইটারকে। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি ফেসবুক।
কেন্দ্রের সেই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছিলেন তৃণমূলের সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়ান। তিনি বলেন, ‘মো-শাহ হলেন স্বৈরাচারী। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই সেটা বলে আসছি। পরাজিতরা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না।’ সেইসঙ্গে তিনি কটাক্ষ করেছিলেন, ‘টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়ায় আমরা কেন ক্ষুব্ধ হচ্ছি! ওঁরা তো শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা নাগরিকদের অক্সিজেন বন্ধ করে দিচ্ছেন।’