অন্ধ মুনির সন্তান শ্রবণ কুমার। রামায়ণের এই চরিত্র বাবা-মার ইচ্ছে পূরণ করতে বাকে চাপিয়ে তাঁদের কাঁধে করে নিয়ে তীর্থে বেরিয়েছিলেন। তবে এটা কলিযুগ। দৃষ্টিহীন বাবা-মায়ের ভার বহন করতে টোটোর হাতল ধরেছে মাত্র ৮ বছরের রাজাগোপাল রেড্ডি। সংসারের জোয়াল ঠেলতে সাওয়ারি নিয়ে দিনরাত ছুটে বেড়াচ্ছে শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। কোনওমতে ব্রেক পর্যন্ত তার পা পৌঁছেয়। তবুও প্রাণপণে সওয়ারিদের গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছে দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছে এই খুদে।
অন্ধপ্রদেশের চিত্তুর জেলার তিরুপতির কাছে গঙ্গুদুপল্লের গ্রাম। সেখানেই এই খুঁদেকে টোটো চালাতে দেখেন সাওয়ারিরা। কম বেশি সবাই তাকে এখন চিনে গিয়েছেন।
এই খুদেকে টোটো চালাতে দেখে এক ব্যক্তি তার ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন। তারপর থেকেই ভাইরাল হয়ে যায় এই খুদের ভিডিওটি।
অনেক নেটিজেনরা তার যেরকম প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন, আবার অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, এত ছোট ছেলেকে কীভাবে গাড়ি চালাতে দেওয়া হচ্ছে?
প্রসঙ্গত, বাইক অথবা অটো রাস্তায় বার করতে গেলে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। তাছাড়াও আইনি জটিলতাও রয়েছে। সেটা হল, নিয়ম অনুযায়ী চালককে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয় না। তবে টোটোর ক্ষেত্রে এখনও সেরকম কোনও নিয়ম লাগু করা হয়নি। সেজন্য টোটোকেই নিজের জীবনধারণের জন্য বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে এই খুদে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজা গোপালের মা-বাবা দৃষ্টিহীন। কর্মক্ষমও। তাছাড়া বাড়িতে রয়েছে তার ছোট ছোট দুই ভাই বোন। অগত্যা সবার ভরণপোষণ করতে ছোট্ট কাঁধে পরিবারের দায়িত্ব তুলে নিয়েছে তৃতীয় শ্রেণীতে পাঠরত রাজা।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ই টোটোটি ডাউন পেমেন্ট দিয়ে কিনতে ৭০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে ওই পরিবারের। মাসে ৮ হাজার টাকা করে কিস্তি মেটাতে হচ্ছে। তাই অভাবের সংসারে টান পড়ায়, টোটো চালানোর ফাঁকেই চাল-ডাল বিক্রি করে আয় করতে হচ্ছে এই খুদেকে। এই ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে চালকের আসনে একদম সামনে বসে কোনওমতে ব্রেকে পা পাচ্ছে এই খুদে। এই ভাবেই সোওয়ারি বসিয়ে টোটো নিয়ে ছুটছে শহরের রাস্তায়। তার এই জীবন সংগ্রামকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন নেটিজেনরা।