শুক্রবার ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে রাজস্থানের জয়পুরে। সেখানে একটি রাসায়নিক ভর্তি ট্রাক ও এলপিজি ভর্তি ট্রাঙ্কারের ধাক্কায় বিধ্বংসী আগুন লাগে। তাতে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪ জন। ভয়ঙ্কর সেই দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন চোখের সামনে থেকে। কোনওভাবে ঘটনাস্থল থেকে পালাতে পেরেছেন বেশ কয়েকজন। যার মধ্যে রয়েছেন সুমের সিং নামে এক ট্রাক চালক। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ও আগুনে বেশ কয়েকটি যানবাহন পুড়ে গিয়েছে। এর মধ্যে সুমেরের ট্রাকটিও পুড়ে গিয়েছে। তিনি কোনওভাবে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে প্রাণ বাঁচান।
আরও পড়ুন: জয়পুরে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড ট্যাঙ্কারে, ৪০টি গাড়িতে আগুন, নিহত ৫, আহত ৪১
বিভীষিকাময় সেই ভোরের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে ঘটনাটি নরকের সঙ্গে তুলনা করেছেন চালক সুমের সিং। ৪০ বছর বয়সি সুমের অন্য দিনের মতো বিশ্বকর্মা শিল্প এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। তখন হঠাৎ বীভৎস বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড দেখেন তিনি। তার কথায়, সেই দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল যেন নরক। তখন আগুনের দিকে গাড়ি এড়াতে তিনি এক মুহূর্তও নষ্ট না করে ট্রাকটি রাস্তা থেকে বাঁ দিকে নিয়ে যান। ট্রাক থামানো মাত্রই তিনি লাফ দেন এবং দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। সুমের সিং বেঁচে গেলেও তাঁর ট্রাক সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
শুক্রবার ভোর ৫ টার দিকে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার ফলে ট্যাঙ্কার থেকে গ্যাস লিক হয়ে যায়। প্রায় ৩০০ মিটার পর্যন্ত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাতে কমপক্ষে ৩৭টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়।এই সব যানবাহনের মধ্যে ছিল দুটি বাস এবং বেশিরভাগই ছিল ট্রাক, ট্রেলার এবং কন্টেইনার। আগুন এতটাই তীব্র ছিল যে দমকলও গাড়িগুলির কাছাকাছি পৌঁছতে হিমশিম খেয়ে যায়। কিছু ট্রাক মহাসড়কের ধারে দাঁড় করানো ছিল। চালক ও হেল্পাররা ভিতরে ঘুমাচ্ছিলেন। যে গাড়িগুলিতে আগুন লেগেছিল তার মধ্যে একটি ছিল একটি প্রাইভেট স্লিপার বাসও। সেটি উদয়পুর থেকে জয়পুর যাচ্ছিল। সেই সময় বাসে আগুন লেগে গেলে যাত্রীরা বের হতে হিমশিম খেয়ে যায়।
সুমের বলেন, ‘আমি বাগরু থেকে আমার ট্রাক নিয়ে বিশ্বকর্মা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতে যাচ্ছিলাম। কিছু সামগ্রী বোঝাই করার জন্য। খুব ঠান্ডা ছিল এবং আমি স্বাভাবিক গতিতে যাচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে, প্রায় ২০০ মিটার এগিয়ে গিয়ে আমি ধোঁয়ার মেঘ দেখতে পেলাম। মনে হচ্ছিল যেন আমার সামনে নরক। আমি ট্রাকটিকে পুরোপুরি বাম দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছিলাম। পরে ট্রাক থেকে লাফ দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। আমি যখন দূর থেকে পিছনে তাকালাম, তখন আগুন ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলাম না। যেন মনে হচ্ছিল আমার চোখের সামনে নরক।’
তাঁর কথায়, ‘এই বয়সে আমি কীভাবে এত দ্রুত দৌড়াতে পেরেছি তা আমি নিজেও জানি না। আমার ট্রাকেও আগুন ধরে গিয়েছিল। চারিদিকে শুধু লোকজন সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। হঠাৎ একজন লোক আমার কাছাকাছি চলে আসেন। তার শরীরে কোনও কাপড় ছিল না। কিন্তু, আমার কাছে তাকে সাহায্য করার কোনও উপায় ছিল না।’ সুমের সিং জানান, মৃত এবং হতাহতদের মধ্যে বেশিরভাগ আক্রান্তই হলেন ট্রাক চালক, হেল্পার এবং বাসের যাত্রী।
একজন স্কুল ভ্যান চালক জানান, আগুন ১ কিলোমিটার দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল। মহাসড়কে চারিদিকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ ছিল। তিনি বলেন, যখন তিনি ঘটনাস্থলের কাছাকাছি গিয়েছিলেন তখন লোকজন বাঁচার জন্য চিৎকার করছে এবং সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। তিনি চোখের সামনে একজনকে পুড়ে যেতে দেখেছেন। এই দৃশ্য ছিল ভয়ঙ্কর।