চেন্নাইয়ের ভাবা পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র (বার্ক)-এর বিজ্ঞানী ছিলেন আরতি বর্মা। দিন কয়েক আগে তাঁর আকস্মিক ও অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। কিন্তু, তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে যে তথ্য উঠে এল, তা এককথায় মর্মান্তিক ও শোচনীয়।
পুলিশের দাবি, আরতিকে খুন করেছে তাঁরই নাবালক ছেলে! শুধু তাই নয়। মাকে খুন করে যাতে ধরা না পড়তে হয়, তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে, এমনকী নিজের বাবাকেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে ওই কিশোর!
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, পুলিশের কাছে ওই নাবালক শিকার করেছে, সে তার মাকে তাদের গোরক্ষপুরের বাড়িতেই খুন করেছে। যদিও আগে সে পুলিশকে ও তার বাবাকে জানিয়েছিল, তার মা পড়ে গিয়েছিলেন।
বুধবার খুনের অভিযোগে একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের পুলিশ। তাদের তরফে এক আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত ৩ ডিসেম্বর মায়ের মাথা দেওয়ালে ঠুকে তাঁকে খুন করে ১৭ বছরের ওই কিশোর।
আরতির স্বামী রাম মিলনও একজন বিজ্ঞানী এবং তিনিও বার্ক-এই কর্মরত। রাম মূলত তামিলনাড়ুর কলপক্কম এলাকায় থাকেন।
ঘটনার তদন্ত সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমের সামনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছেন স্থানীয় পুলিশ সুপার জিতেন্দ্র কুমার। তিনি জানিয়েছেন, 'প্রায় দু'ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর অবশেষে ওই টিনেজার জানায় মায়ের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়েছিল। তার জেরেই দেওয়ালে মায়ের মাথা ঠুকে দেয় সে। যার ফলে প্রাণ যায় আরতি বর্মার।' এই ঘটনা ঘটে গত ৩ ডিসেম্বর।
এদিকে, টানা দু'দিন ধরে আরতি ফোন সুইচ্ড অফ চিন্তিত হয়ে পড়েন তাঁর স্বামী রাম। তিনি তাঁর শ্যালিকাকে তাঁদের গোরক্ষপুরের বাড়িতে পাঠান। যাতে তিনি আরতির খোঁজখবর নিতে পারেন। এই ঘটনা ঘটে গত ৭ ডিসেম্বর। কিন্তু, সেদিন ওই বাড়ির দরজা বাইরে দিয়ে তালাবন্ধ ছিল। ফলত, রামের শ্যালিকা ফিরে যান।
এরপর আর রাম দেরি করেননি। পরদিন সন্ধ্যায় তিনি গোরক্ষপুর পৌঁছে যান। এবং বাড়িতে ঢুকে তিনি দেখেন, তাঁর স্ত্রীর দেহ মেঝেয় পড়ে রয়েছে। এরপরই পরিবারের তরফে স্থানীয় থানায় খবর পাঠানো হয়।
এদিকে, এলাকারই একটি শিব মন্দিরে আরতি ও রামের ১৭ বছরের ছেলের খোঁজ পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে সে পুলিশকে ও তার বাবাকে জানায়, তার মা পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন এবং তার ফলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
ছেলেটি আরও দাবি করে, মায়ের মৃত্যুতে সে ভয় পেয়ে গিয়েছিল বলেই বাড়ির দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয় এবং চারদিন ধরে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়।
কিন্তু, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সামনে আসতেই বোঝা যায়, ওই নাবালক মিথ্য়া কথা বলছে। কারণ, পড়ে গিয়ে মৃত্যু হলে যে ধরনের আঘাত থাকার কথা, আরতির শরীরের তেমন আঘাত ছিল না। বরং, তার মাথার আঘাত দেখেই চিকিৎসকরা বুঝতে পেরেছিলেন তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে মারা হয়েছে।
এছাড়াও, দু'টি ভিন্ন জায়গায় আরতির রক্তের নমুনা পাওয়া যায়। যা থেকে বোঝা যায়, মৃত্যুর পর তাঁর শরীর এক জায়গা থেকে টেনে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়, বাড়িতে বাইরে থেকে কেউ আসেনি।
এছাড়াও, আরতির ছেলের ঘর থেকে প্রচুর পরিমাণে নগদ টাকা উদ্ধার হয়। যা মূলত ছিল - ৫০০, ২০০ এবং ১০০ টাকার নোটে। এরপর ওই কিশোরের উপর সন্দেহ আরও বাড়ে পুলিশের।
শেষে পুলিশের জেরার মুখে ভেঙে পড়ে একাদশ শ্রেণির ওই পড়ুয়া। সে জানায়, গত ৩ ডিসেম্বর তার মা তাকে স্কুলে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু, ছেলে স্কুলে যেতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে মা-ছেলের মধ্য়ে বচসা হয়।
ক্ষোভে, হতাশায় ছেলের দিকে টাকা ছুড়ে মারেন আরতি। তাতে তাঁর ছেলে আরও ক্ষেপে যায় এবং সটান মায়ের মাথা ধরে দেওয়ালে ঠুকে দেয়! এই ঘটনা জানার পরই ওই কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।