প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে শেষ সপ্তাহের প্রচারে জমজমাট মার্কিন মুলুক। শুধুমাত্র এই এক সপ্তাহের মধ্যেই একের পর এক নাটকীয় ঘটনার ঘনঘটা দেখা গিয়েছে সেদেশে।
যার মধ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেফাঁস মন্তব্যের পাশাপাশি শেষ লগ্নে নজর কেড়েছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট তথা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সমর্থক জো বাইডেনের পালটা বেফাঁস মন্তব্য।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেফাঁস মন্তব্যসমূহ:
বেফাঁস এবং বিতর্কিত মন্তব্য করাটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নতুন কিছু নয়। এবারের নির্বাচনী প্রচারেও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। সম্প্রতি আমেরিকার ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে একটি নির্বাচনী সমাবেশ করেন ট্রাম্প। সেই নির্বাচনে তিনটি 'লুজ বল' ছাড়েন তিনি।
প্রথমত - আমেরিকায় বসবাস করতে আসা অন্য়ান্য দেশের মানুষ, বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকান বংশোদ্ভূতদের খাটো করতে পুয়ের্তোরিকোকে 'আবর্জনার ভাসমান দ্বীপ' বলে কটাক্ষ করেন ট্রাম্প।
দ্বিতীয়ত - ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন যে তিনি 'তিনিই মহিলাদের রক্ষক! তা, তাঁরা সেটা পছন্দ করুন বা না করুন'! অর্থাৎ - ট্রাম্প সরাসরি, প্রকাশ্যে মহিলাদের উপর খবরদারি এবং তাঁদের অধিকার খর্ব করার বার্তা দেন।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প একাধিকবার প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন, তিনি মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকার মানেন না!
তৃতীয়ত - ট্রাম্প বলেন, লিজ চেনির মতো তাঁর রিপাবলিকান সমালোচকদের বুলেটের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া উচিত!
কমলা হ্যারিসের ‘গলার কাঁটা’ জো বাইডেনের 'আবর্জনা' মন্তব্য:
এখন বিষয় হল, কমলা হ্যারিস ট্রাম্পের এই সমস্ত লুজ বলে ছক্কা হাঁকাতেই পারতেন। সেই চেষ্টাও তিনি করেছেন। কিন্তু, তাতে সবথেকে বড় ব্যাঘাত যিনি ঘটিয়েছেন, তিনি হলেন হ্যারিসেরই 'বস', মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ট্রাম্পের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং তাঁর 'আবর্জনা' মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে পালটা ট্রাম্প সমর্থকদেরই 'আবর্জনা' বলে বসেন তিনি। তাতে অধিকাংশ মার্কিনি খাপ্পা হয়ে যান।
তাঁদের সেই রাগ আরও বেড়ে যায়, যখন হোয়াইট হাউসের তরফে বাইডেনের সেই 'আবর্জনা' মন্তব্য দুমড়ে-মুচড়ে অন্য রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
ফলত, কমলা হ্যারিসকে প্রকাশ্যে বলতে হয়, তিনি বাইডেনের এহেন মন্তব্য মোটেও সমর্থন করেন না এবং তিনি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নানা ফ্যাক্টর:
প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে প্রদেশগুলির ফলাফল সবথেকে অনিশ্চিত, তার মধ্যে প্রধান হল - পেনসিলভেনিয়া। এখানে পুয়ের্তোরিকো থেকে বসবাস করতে আসা ভোটারের সংখ্যা ১ লক্ষেরও বেশি। অন্যদিকে, অ্যারিজোনা এবং নেভাডাতেও ল্যাটিন মানুষের সংখ্যা ভালোই।
এহেন প্রেক্ষাপটে শুক্রবার নেভাডায় আয়োজিত একটি জনসভায় কমলা হ্যারিসের সমর্থনে নামেন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ল্যাটিন-মার্কিন তারকা জেনেফার লোপেজ! যাঁর বাবা-মা আদতে পুয়ের্তোরিকোর মানুষ।
জেনেফার নিজে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধ করেছেন, যাতে তাঁরা ফের একবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে বসানোর পক্ষে রায় দেন।
তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, এবারের নির্বাচনে যদি কমলা হ্যারিস জয়ী হন, তাহলে সেই জয়ের নেপথ্যে মার্কিন নারীশক্তির অবদান থাকবে সবথেকে বেশি।
পাশাপাশি, লিজ চেনির মতো মধ্যপন্থী রিপাবলিকানকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করে ট্রাম্প রিপাবলিকানদের মধ্যেও বিভেদ ঘটিয়ে ফেলেছেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত, কমলা হ্যারিস ইতিমধ্যেই মধ্যপন্থী রিপাবলিকানদের মন জয় করতে সাধ্য মতো প্রচেষ্টা করেছেন। চেনিকে ট্রাম্পের আক্রমণ তাঁর সেই প্রয়াসকেই এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই অবস্থায় প্রচারের একেবারে শেষ লগ্নে কমলা হ্যারিসের কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ট্রাম্প নন, বরং বাইডেনের বেফাঁস 'আবর্জনা' মন্তব্য।
সেটা বুঝে ট্রাম্পও আবর্জনা সংগ্রহের গাড়ি ও আবর্জনা সংগ্রাহকদের পোশাক পরে প্রচার করতে শুরু করে দিয়েছেন! নিজেকে কার্যত খেটে খাওয়া ওই মার্কিনিদের নেতা প্রমাণ করতে চাইছেন তিনি।