কেন্দ্রের তিন তালাক আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে প্রতিবাদ জানিয়ে মামলা করলেন প্রথম মুসলিম মহিলা। তাঁর দাবি, স্বামীদের জেলে পাঠালে নারী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যায় না।
সোমবার বিচারপতি এন ভি রামনের নেতৃত্বাধীন এবং বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি কৃষ্ণ মুরারিকে নিয়ে গড়া সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ নূরবীণা রশিদ নামে ওই মহিলার আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি নোটিশ জারি করেছে। এবার আবেদনটির মুসলিম নারী (বিবাহ অধিকারের সুরক্ষা) আইনের বিরুদ্ধে আরও নয়টি সমগোত্রীয় আবেদনের সঙ্গেই শুনানি হবে।
তালিকায় নজর রাখলেই বোঝা যাবে, এর আগে এই আইনের বিরুদ্ধে কোনও মহিলা প্রতিবাদ জানিয়ে মামলা করেননি। ২০১৯ সালে পাশ করা আলোচ্য আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমস-এর সঙ্গে আলোচনায় আবেদনকারী নূরবীণার আইনজীবী জুলফিকর আলি জানিয়েছেন, ‘তিন তালাক বিরোধী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এই প্রথম কোনও মহিলা শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। এই আবেদনের দ্বারা আমরা প্রমাণ করব কী ভাবে আইনটি মুসলিম মহিলাদের আইনি নিরাপত্তা দিতে গিয়ে উলটে তাঁদের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
জুলফিকর জানিয়েছেন, আবেদনকারী নূরবীণা নিজেও পেশায় আইনজীবী এবং ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন উওমেন’স লিগ সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এই সংগঠন কেরালার ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ-এর (IUML) সঙ্গে যুক্ত।
২০১৭ সালের ২২ অগস্ট মুসলিম সমাজে স্বামীর উচ্চারিত তিন বার ‘তালাক’ শব্দে বিবাহ বিচ্ছেদ রীতিকে (তালাক-এ-বিদ্দত) অসংবিধানিক ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। স্বামী পরিত্যক্তা পাঁচ মুসলিম মহিলার করা আবেদনের ভিত্তিতে এই রায় দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের ঘোষণার জেরে তিন তালাক প্রদানকারী মুসলিম স্বামীদের শাস্তি দিতে একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১৯ সালের অগস্ট মাসে সেই অর্ডিন্যান্স শেষ পর্যন্ত আইন হিসেবে পাশ হয়, যার জেরে দোষী স্বামীদের জামিন অযোগ্য তিন বছরের সাজার বিধান উল্লেখ থাকে। এই আইনে নির্যাতিতার তরফে তাঁর কোনও আত্মীয়ও অভিযুক্ত স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারেন।
শীর্ষ আদালতকে তাঁর আবেদনে নূরবীণা প্রশ্ন করেছেন, তিন তালাক আইনে উল্লিখিত বিবাহ বিচ্ছিন্নার কোনও আত্মীয়ের দ্বারা মামলা দায়ের করার ব্যবস্থা আদৌ প্রয়োজনীয় কি না। তাঁর মতে, এই ব্যবস্থা নির্যাতিতার পক্ষে তো বটেই, সমগ্র বিবাহ নামের প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই অবমাননাকর।