বাঘের হাত থেকে ভাগ্যক্রমে প্রাণ বাঁচল মত্স্যজীবীর। বৃহস্পতিবার সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে মাছ ধরার সময় বাঘের কবলে পড়েন তিনি। তবে সঙ্গীদের তত্পরতায় কোনওমতে প্রাণরক্ষা হল তাঁর। আপাতত কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল চিকিত্সাধীন বছর ৩১-এর সুদর্শন।
তিনি জানান, সোমবার ভগ্নিপতি এবং অন্য তিন বন্ধুর সঙ্গে সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। এক-একবার গিয়ে টানা দশ-বারো দিন নৌকায় থাকেন তাঁরা। কাঁকড়া, মাছ, চিংড়ি ধরেন। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা নাগাদ হরিখালি খাঁড়িতে মাছ ধরতে নামেন তিনি। পাশেই কয়েক হাত দূরে রাখা নৌকা। এমন সময়ে হঠাত্ই সুদর্শনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঘ। ছিটকে এসে নৌকার সঙ্গে ধাক্কা খান সুদর্শন। ধাক্কার চোটে নৌকার উপরের অংশ ভেঙে খোলের মধ্যে পড়ে যান নৌকায় থাকা বাকি সদস্যরা।
সুদর্শন জানান, সেই সময়ে মাথা কাজ করছিল না। প্রচণ্ড জোরে থাবা মারছিল বাঘ। তিনি কোনওমতে বাঘের মুখ চেপে ধরার চেষ্টা করেন। তবে ততক্ষণে দ্রুত মোকাবিলায় এগিয়ে আসেন তাঁর সঙ্গীরা। সকলে মিলে বৈঠা, লাঠি দিয়ে মরিয়া হয়ে মারতে শুরু করেন বাঘটিকে। শেষমেশ কাঁকড়া ধরার শিক দিয়ে আঘাত হানতেই রনে ভঙ্গ দেয় বাঘ। সুদর্শনকে ছেড়ে জঙ্গলের দিকে ঝাঁপিয়ে চলে যায় সে। ততক্ষণে রক্তাক্ত হয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন তিনি। সঙ্গীরাই সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক শুশ্রূষার পর কলকাতায় স্থানান্তর করা হয় তাঁকে।
চিকিত্সকরা জানালেন, গালের ডান দিকের হাড় ভেঙে গিয়েছে তাঁর। শীঘ্রই অস্ত্রোপচার করা হবে। তাঁর গলার কাছেও রয়েছে বাঘের নখের বড় ক্ষত। তবে আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। সুদর্শনের মনের জোরের প্রশংসা করেছেন চিকিত্সকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্নলিখিত কারণে বাঘ মানুষের উপর আক্রমণ করে:
১. প্রজননকাল, শাবক রয়েছে এমন বাঘ অত্যন্ত টেরিটরিয়াল ও সাবধানী হয়। ফলে তাদের এলাকায় প্রবেশ করলে আক্রমণ হানে।
২. আহত, অসুস্থ, বয়স্ক বাঘের পক্ষে দ্রুতগামী হরিণ জাতীয় প্রাণীর নাগাল পাওয়া কঠিন। ফলে তারা গবাদি পশু এবং কখনও কখনও মানুষের মতো সহজ শিকার বেছে নেয়।
৩. এর আগেও মানুষ ধরার অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন বাঘ সহজ শিকার হিসাবে মানুষ ধরার চেষ্টা করে। তবে তা বেশ বিরল।
৪. বনাঞ্চল কেটে বাড়ি-কৃষিজমি, জলস্তর বৃদ্ধির ফলে জঙ্গলে প্লাবন ইত্যাদি কারণে বাঘের খাদ্য যে তৃণভোজী প্রাণীরা, তাদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। ফলে বাড়ছে লোকালয়ে বাঘের প্রবেশ। আর তাতেই বাড়ছে বাঘ-মানুষ সংঘাত।
কলকাতা হাইকোর্টের এক সাম্প্রতিক নির্দেশ অনুযায়ী, সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ ও রিজার্ভ ফরেস্ট শুধুমাত্র সংরক্ষণ, তদারকি এবং নিরাপত্তার প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনওভাবে ব্যবহার করা যাবে না। বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের ৪০০০ বর্গ কিলোমিটার, টাইগার রিজার্ভের ২৫০০ বর্গ কিলোমিটার ও রিজার্ভ ফরেস্টের ৬০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।