আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই আমেরিকা সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একথা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বয়ং।
তথ্যাভিজ্ঞ মহলের একাংশ মনে করছে, মোদীর এই মার্কিন সফর আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং ভারত-আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষ বার্তাবাহী। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, সদ্য প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শেষ বিদেশি অতিথি (রাষ্ট্রনেতা) ছিলেন মোদী। আবার বাইডেনের উত্তরসূরি ট্রাম্পের প্রথম বিদেশি অতিথিও সেই মোদীই। এর থেকেই স্পষ্ট, ভারতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।
অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, বিশ্বের বর্তমান কূটনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে পাঁচটি মাপকাঠিতে এই সফরের গুরুত্বের বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। কী সেগুলি?
প্রথমত, আগামী দিনে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং পশ্চিম এশিয়ায় ভারত ও আমেরিকার কৌশলগত অবস্থান কী হতে চলেছে, মোদীর এই আসন্ন সফর কি সেই সম্পর্কে কোনও ইতিবাচক বার্তা দেবে?
কারণ, এক্ষেত্রে দুই দেশের কাছেই কয়েকটি 'কমন ফ্য়াক্টর' রয়েছে। যেমন - ভারত ও আমেরিকা, দুই দেশই চিনকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। দুই দেশই চায় সৌদি-ইজরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তি বা সমঝোতা হোক এবং দুই দেশই চায় ইউরোপে স্থিতাবস্থা বজায় থাকুক ও ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হয়ে শান্তি ফিরুক।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের একটা একান্ত আলাপচারিতা দরকার। এবং সেটা সর্বোচ্চ স্তরেই হওয়া ভালো। কারণ, এই মুহূর্তে এমন একাধিক ইস্যু রয়েছে, যা নিয়ে দুই দেশের মধ্য়ে টানাপোড়েন চলছে। যেমন - দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, অভিবাসন, প্রতিরক্ষা এবং বিনিয়োগ।
ট্রাম্প যদি সেই সমস্ত পদক্ষেপগুলি প্রকাশ্য়ে করতে থাকেন, যা ভারতের পক্ষে অস্বস্তিকর, তাহলে আন্তর্জাতিক মহলের সামনে ভারতকে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। আশা করা যায়, মোদীর আসন্ন সফরে এ নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে আলাদাভাবে কথা হলে, তা উভয় পক্ষের জন্যই ইতিবাচক হবে।
তৃতীয়ত, ট্রাম্প মার্কিন জনতার মধ্যে তাঁর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে এমন একাধিক পদক্ষেপ করতে পারেন, যার ফলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক জনভিত্তিতে আঘাত লাগতে পারে।
বিশেষ করে ট্রাম্প যেভাবে অনুপ্রবেশকারী ও বেআইনি অভিবাসীদের খেদানো শুরু করেছেন, তার ফলে আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয়, যাঁদের মধ্যে বহু গুজরাটিও রয়েছেন, তাঁরা নেতিবাচকভাবে প্রাভাবিত হতে পারেন। এটা মোদীর জন্য মোটেও ভালো কথা নয়।
এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়টা এমনভাবে সামাল দিতে হবে, যাতে আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের স্বার্থ যত দূর সম্ভব রক্ষা করা যায়। আবার ট্রাম্পও নিশ্চিত হতে পারেন যে এই ইস্যুতে আখেরে তাঁরই রাজনেতিক জয় হয়েছে। অর্থাৎ সেই দিক দিয়েও মোদীর এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
চতুর্থত, মোদীর এই সফরের অনেকটা জুড়ে থাকতে পারে চিন। দ্বিতীয়বারের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ও পরে ট্রাম্পের চিনকে নিয়ে অবস্থান যথেষ্ট লক্ষ্যণীয়।
নির্বাচনের আগে তাঁর মধ্যে যে কট্টর চিন বিরোধিতা দেখা গিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তা যেন অনেকটাই বদলে গিয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে চিনের একের পর এক ইস্যুতে টানাপোড়েন অব্যাহত। প্রকাশ্যে তা আগের তুলনায় অনেকটা স্তিমিত বলে মনে হলেও, সত্যিই কি তাই? এই প্রশ্ন তুলছে কূটনৈতিক মহলও।
এই প্রেক্ষাপটে চিন ইস্যুতে ভারত ও আমেরিকা কতটা পরস্পরকে ভরসা করে, সেটা মোদীর আসন্ন সফরে অনেকটা স্পষ্ট হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
পঞ্চমত, বিশ্বজুড়ে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাড়বাড়ন্ত এবং সেই ক্ষেত্রে চিনা সংস্থা ডিপসিক-এর অনুপ্রবেশ, ভারত এবং আমেরিকা - দুই দেশের কাছেই চিন্তার বিষয়। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় সুরক্ষা, ডিজিট্যাল সুরক্ষার মতো বিষয়গুলি মাথায় রেখে প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিগত বাণিজ্যে বিনিয়োগ করার বিষয়ে ভারত ও আমেরিকা কতটা অংশিদারিত্ব পালন করতে পারে, তাও মোদীর এই সফরে বোঝা যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।