ফিক্সড ডিপোজিটের (FDs) হার ফের বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই বহু আমানতকারী দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের জন্য একটি স্থায়ী আমানত করে রাখা নিয়ে ফের ভাবনা চিন্তা করছেন। বিশেষত সিনিয়র সিটিজেনরা সুরক্ষিত বিনিয়োগের মাধ্যম হিসাবে এক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন।
কিন্তু ফিক্সড ডিপোজিটের জমানো টাকা হঠাত্ প্রয়োজনের সময়ে তুলতেও হতে পারে। সেক্ষেত্রে পেনাল্টির মতো বিষয়ও রয়েছে। ফলে আমানত করার আগে এই ধরনের অকালে টাকা তুলে নেওয়ার নিয়মাবলীর বিষয়ে আরও বেশি করে সচেতনতার প্রয়োজন।
FD-র নানা ভাগ
মূলত দুই ধরনের FD রয়েছে: কিউমিলেটিভ এবং নন-কিউমিলেটিভ।
- কিউমিলেটিভ FD-তে বিনিয়োগ করলে তখন ব্যাঙ্ক বা নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থাগুলি (NBFCs) আমানতের সময়কালে কোনও সুদ প্রদান করে না। সম্পূর্ণ সুদই সঞ্চিত হতে থাকে। ফলে মেয়াদপূর্তির সময়ে মূল অঙ্কের সঙ্গে পুরোটা একত্রিত হয়।
- নন-কমিউলেটিভ FD হলে, আপনি মাসিক, ত্রৈমাসিক, অর্ধ-বার্ষিক এবং বার্ষিক ভিত্তিতে সুদ গ্রহণ করতে পারেন। এই ধরনের FD-র মেয়াদ ৭ দিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
যাঁরা FD করে তার ভিত্তিতে কর ছাড় পেতে চান, তাঁদের অবশ্য ৫ বছরের আবশ্যিক লক-ইন পিরিয়ডসহ ট্যাক্স-সেভিং FD-ই বেছে নিতে হবে। এগুলি ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত 'ট্যাক্স সেভিংস ডিডাকশন'-এর সুবিধা দেয়। কিন্তু এক্ষেত্রে FD ম্যাচিওর হওয়ার আগে আপনি অকালে টাকা তুলতে পারবেন না। তাছাড়া এই ধরনের FD ঋণের জন্য বন্ধকও রাখতে পারবেন না।
প্রি-ম্যাচিওর আমানত তোলার নিয়ম:
এফডি ম্যাচিওর হওয়ার আগেই টাকা তোলার অপশন রয়েছে বটে। তবে সেক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক সময়ের আগে আমানত বন্ধ করার জন্য আপনাকে জরিমানা চার্জ করবে। পেনাল্টি চার্জ সাধারণত সুদের হারের ০.৫% থেকে ৩% পর্যন্ত হয়।
তবে কিছু ব্যাঙ্কের আরেকটি নিয়ম আছে। ধরুন টাকা তুলে নিলেন। এবার সেই টাকাই তাদের অন্য কোনও বিনিয়োগ বিকল্পে রাখলেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে কোনও জরিমানা চার্জ করা হবে না। ব্যাঙ্ক বা NBFC-র মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে, অথবা নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে, অথবা ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে আপনার FD বন্ধ করতে পারেন।
নিয়ম তো জানা হল। এবার এক নজরে কিছু শীর্ষস্থানীয় রাষ্টায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক, বেসরকারি ব্যাঙ্ক এবং NBFC-তে স্থায়ী আমানতে অকালে তুলে নেওয়ার নিয়ম এবং জরিমানা চার্জ জেনে নেওয়া যাক,
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI): স্টেট ব্যাঙ্কে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত FD সময়ের আগে তুলে নেওয়ার জন্য ০.৫% জরিমানা চার্জ করা হয়। বিনিয়োগ ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে ১% জরিমানা ধার্য করে SBI। এছাড়াও, সাত দিনের কম সময় রাখা আমানতের উপর ব্যাঙ্ক কোনও সুদ দেয় না। পড়ুন: ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার বাড়াল SBI! আপনার কত লাভ হবে? দেখে নিন
পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (PNB): সমস্ত মেয়াদের FD ভাঙানো বা আংশিক টাকা তুলে নিলে সেক্ষেত্রে PNB 1% সুদের জরিমানা ধার্য করে। এক্ষেত্রে, প্রদেয় সুদের হার হবে আমানতের আসল হার মাইনাস(-) ১%।
HDFC ব্যাঙ্ক: FD অকালে ক্লোজ করলে সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য সুদের হার মূল রেটের তুলনায় কম হবে। এর পাশাপাশি FD অ্যাকাউন্ট সময়ের আগে ক্লোজ করার ক্ষেত্রে (সুইপ-ইন এবং আংশিক), ব্যাঙ্ক ১% জরিমানা চার্জ করে।
ICICI ব্যাঙ্ক: ১ বছর হওয়ার আগেই যদি ৫ কোটি টাকার কম আমানত তুলে নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে ICICI ব্যাঙ্ক ০.৫% জরিমানা ধার্য করে। যদি আপনি এক বছর হওয়ার পরে টাকা তুলে নেন সেক্ষেত্রে ১% জরিমানা হবে। পড়ুন: ICICI Bank FD Rates: ফের ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার বৃদ্ধি
বাজাজ ফাইন্যান্স: যদি ৩-৬ মাসের মধ্যেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ দেন, সেক্ষেত্রে FD-তে কোনও সুদই পাওয়া যাবে না। তবে ছয় মাস পরে, শর্তাবলী সাপেক্ষে, টাকা তোলার উপর ২-৩% সুদের জরিমানা ধার্য করা হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, প্রথম তিন মাস কিন্তু এক টাকাও তোলা যায় না।
মাহিন্দ্রা ফাইন্যান্স: এক্ষেত্রেও FD অকালে ক্লোজ করার নিয়ম Bajaj Finance-এর মতোই৷
সঠিক FD কীভাবে বেছে নেবেন?
এর জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে। BankBazaar.com-এর সিইও আদিল শেঠি-র মতে, আপনাকে প্রথমে বিভিন্ন মেয়াদের এফডি-তে দেওয়া সুদের হার পরীক্ষা করতে হবে। পর পর সেগুলি খাতায় লিখে ফেলুন। এরপরে, সেই হারগুলি ত্রৈমাসিক বা মাসিক চক্রবৃদ্ধি হয় কিনা তা খুঁজে বের করুন। মাসিক সুদের চক্রবৃদ্ধি থাকা FD-তে স্বাভাবিকভাবেই বেশি রিটার্ন পাবেন। FD অ্যাকাউন্ট খোলার আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা অবশ্যই যাচাই করুন।
সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে
FD-র টাকা হঠাত্ প্রয়োজনে তুলতে হতে পারে? সেক্ষেত্রে একসঙ্গে সম্পূর্ণ সঞ্চয় একটি FD-তে না ঢোকানোই শ্রেয়। বরং 'ল্যাডার' কৌশলে বিনিয়োগ করতে পারেন। মানে ধরুন, আপনার ১-২ বছরের মধ্যেই হঠাত্ টাকার প্রয়োজন হতেও পারে। এদিকে তার চেয়ে বেশি টাকাই সঞ্চয়ে আছে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন মেয়াদে ভাগ করে আপনার টাকা FD করুন। ১-২ বছর পর টাকা ম্যাচিওর হয়ে গেলে এবং সেটা তখন প্রয়োজন না হলে আবার স্বল্প মেয়াদের FD-তেই টাকা রেখে দিন। এভাবে লুপ-এ খেলতে থাকুন।
'তারা যে রিটার্ন দিচ্ছে শুধুমাত্র তার উপর ভিত্তি করেই সরাসরি দীর্ঘমেয়াদি FD মেয়াদ বাছাই করা এড়িয়ে চলুন। বরং আপনার পরে যেরকম টাকার প্রয়োজন হতে পারে, সেটি মাথায় রেখে FD বেছে নিন,' বলছেন আদিল শেঠি। আরও পড়ুন: SBI-এর মিনিমাম ব্যালেন্স নীতির এই বড় বদলের বিষয়ে জানেন আপনি?
বিনিয়োগের আগে, তাই অবশ্যই আপনার ব্যাঙ্কের সমস্ত নিয়মাবলী খতিয়ে দেখুন। বিনিয়োগ, বাজার সংক্রান্ত খবর পেতে চোখ রাখুন হিন্দুস্তান টাইমস বাংলায়।