রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবং ছিন্নমূল হওয়ার ফলে ভারতে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে বলে ইতিমধ্যেই নানা মহলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। সম্প্রতি জানা যায়, গোপনে ঝাড়খণ্ডে ঢুকে ঘাঁটি গাড়ছে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিরা। এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে এবার মাঠে নাম এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
তথ্য বলছে, এই প্রথম পিএমএলএ বা আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধী আইনের আওতায় অনুপ্রবেশের অভিযোগের তদন্ত করছে ইডি। গত ৬ জুন রাঁচি পুলিশের তরফে সে রাজ্যে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ নিয়ে স্থানীয় বারিয়াতু থানায় একটি এফআইআর করা হয়।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্তে নেমেছে ইডি। যদিও সূত্রের খবর, বৃহত্তর প্রেক্ষাপট খতিয়ে দেখতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। এই ধরনের অনুপ্রবেশের মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি বা দল কোনওরকম রাজনৈতিক সুবিধা অর্জন করছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখবেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।
সূত্রের আরও দাবি, প্রাথমিকভাবে দু'টি বিষয় খতিয়ে দেখবে ইডি। প্রথমত, বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশে আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে কিনা। এবং দ্বিতীয়ত, এক্ষেত্রে কোনওভাবে এফইএমএ (বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় নিয়ন্ত্রণ আইন) লঙ্ঘন করা হয়েছে কিনা।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরই ঝাড়খণ্ডে বিধানসভার নির্বাচন রয়েছে। নির্বাচনের প্রচারে অন্যতম ইস্যুই হল, রাজ্যে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ। এই প্রেক্ষাপটে বেআইনিভাবে ভিনদেশিদের দেশে ঢুকিয়ে কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধি কার্যকর করা হচ্ছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখবেন ইডি আধিকারিকরা।
রবিবারই ঝাড়খণ্ডে নির্বাচনী প্রচার সারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জামসেদপুরে আয়োজিত জনসভার মঞ্চ থেকে সরাসরি জেএমএম, কংগ্রেস ও আরজেডির জোট সরকারকে নিশানা করেন তিনি।
মোদীর অভিযোগ, রাজ্যের বর্তমান সরকার সাঁওতাল পরগনা ও কোলহানের স্বাভাবিক জনবণ্টন নষ্ট করে দিচ্ছে। তাদের মদতেই রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিরা ওইসব এলাকায় বেআইনিভাবে ঘাঁটি গাড়ছে।
এমনকী, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ - পড়শি এই দুই রাজ্যে অনুপ্রবেশ করানোর জন্য রীতিমতো সিন্ডিকেট রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে। এবার এর সত্যাসত্য যাচাই করে দেখবে ইডি।
ঝাড়খণ্ড পুলিশের দায়ের করা সংশ্লিষ্ট এফআইআরে চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয়েছে। একটি অভিযানে ছয় তরুণীকে পাকড়াও করে তারা। ধৃতদের সকলেরই বয়স কুড়ির কোটায় এবং তাঁরা সকলেই হয় বাংলাদেশি অথবা রোহিঙ্গা।
পুলিশের দাবি, এঁদের সকলেরই ভুয়ো আধার কার্ড রয়েছে। তাতে তাঁদের হিন্দু বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে এবং তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নকল নামকরণও করা হয়েছে। আর এই সবটাই করা হয়েছে কলকাতা থেকে!
গোয়েন্দাদের হাতে আসা তথ্য বলছে, মানবপাচারকারীরাই ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল এলাকাগুলির মধ্যে দিয়ে গোপনে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিদের ভারতে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
অনুপ্রবেশকারীরা যাতে সহজেই ঝাড়খণ্ডে বসবাস করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে তাদের পশ্চিমঙ্গের মানুষ হিসাবে দেখানো হচ্ছে। তার 'প্রমাণ' হিসাবে কলকাতায় তৈরি ভুয়ো আধার কার্ড পেশ করা হচ্ছে। পুরোটা পরিচালনা করছে কোনও এক বিরাট এবং সংগঠিত চক্র।
মানবপাচারের এই জাল ছড়িয়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে। আর তা সচল রাখতে প্রচুর পরিমাণে টাকার লেনদেন হচ্ছে। সেই 'মানি ট্রেল' ধরেই অপরাধের গোড়ায় পৌঁছতে চাইছে ইডি।
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন যে কেন্দ্র থেকে ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছেন, সাহিবগঞ্জের অধীনস্ত সেই বারহাইতেও প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী রয়েছে বলে দাবি সূত্রের। এমনকী, যত দিন যাচ্ছে, ক্রমশ তাদের সংখ্যা বাড়ছে বলেও নানা মহলের অভিযোগ।
মোদীর অভিযোগ, ভোট ব্যাংকের স্বার্থেই জেনেবুঝে এইসব এলাকায় বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে দিচ্ছে জেএমএম, কংগ্রেস ও আরজেডি। 'ধর্মের নামে তৈরি করা এই ভোট ব্যাংক' রাজনীতি অবিলম্বে বন্ধ করার ডাক দিয়েছেন মোদী।