বাঘিনী জিনত এখনও পর্যন্ত কোনও মানুষকে আক্রমণ করেছে বলে শোনা যায়নি, তবু তার আগমন বার্তাতেই কাঁপছেন ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়ার বাসিন্দারা। মূলত বাসিন্দাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এবার জিনতকে 'ঘরে ফেরাতে' উদ্যোগী হল বন দফতর।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, জিনতকে প্রয়োজনে ঘুম পাড়ানি গুলি ছুড়ে বাগে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি মহারাষ্ট্র থেকে ওডিশায় নিয়ে আসা হয়েছিল ৩ বছরের বাঘিনী জিনতকে। বেশ কিছু দিন ঘেরাটোপে রেখে পর্যবেক্ষণ করার পর জিনতকে ওডিশার সিমলিপাল জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর তারপরই শুরু হয় জিনতের 'এদিন-ওদিক' ঘুরে বেড়ানো!
ওডিশার সীমানা পেরিয়ে জিনত ঢুকে পড়ে ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়ার জঙ্গলে। এমনকী, সে পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রামের সীমানার খুব কাছাকাছি চলে আসে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
এদিকে, চাকুলিয়া জঙ্গল লাগোয়া বসত এলাকায় বেশ কিছু পশুর মৃত্যুতে অনুমান করা হয়, জিনত খুব সম্ভবত সেখানে শিকার করতে শুরু করেছে। এতে জিনতের সুস্বাস্থ্য নিয়ে বনাধিকারিকরা আশ্বস্ত হলেও বাসিন্দাদের মধ্যে ক্রমশ আতঙ্ক বাড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে বুধবার খবর আসে, ৩ বছরের জিনতকে ধরতে প্রয়োজনে তাকে 'ট্র্যাঙ্কুলাইজ' করা যাবে। বস্তুত, জিনতকে তার নতুন ঘরে ফেরাতে ঘুম পাড়ানি গুলি ছোড়ার অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করেছিল ওডিশার বন দফতর।
সূত্রের দাবি, সেই আবেদন মেনে নিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের চিফ ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন সত্যজিৎ সিং। এই মর্মে একটি নির্দেশিকাও জারি করেছেন তিনি।
পাশাপাশি, জিনতকে ধরতে ফাঁদ পাতারও বন্দোবস্ত করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। বাঘিনীকে সেই ফাঁদে ফেলতে টোপ হিসাবে আনা হয়েছে তিনটি মোষ। বনকর্মীরা আশা করছেন, মোষের লোভে জিনত ঠিকই তাঁদের পাতা ফাঁদে পা দেবে।
এদিকে, জিনতকে নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক যেমন ছড়িয়েছে, তেমনই অতি-উৎসাহীদের দাপাদাপিতে জিনত যাতে বিভ্রান্ত না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হচ্ছে বন দফতরকে।
জিনত এখনও পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়ার জঙ্গলেই ঘোরাফেরা করছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। সেখানে অযথা মানুষের ভিড় যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে জারি করা হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-এর ১৬৩ ধারা (পূর্বতন ১৪৪ ধারার সমতুল্য)।
গ্রামবাসীকে যাতে এই পুরো বিষয়টি নিয়ে অবগত ও সচেতন করা হয়, সেই মর্মে নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে স্থানীয় থানা ও পঞ্চায়েতের কার্যালয়ে। মূলত - এই এলাকার অন্তর্গত চিয়াবান্ধি, পান্দ্রাশোলি, ধাধিকা, খড়াবান্ধা গ্রামে এই নির্দেশিকার কার্যকর করা হয়েছে। বাইরের কাউকে আপাতত এই এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। গ্রামবাসীকে সর্বদা সতর্ক ও সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।
ঝাড়খণ্ড সীমানার এপারে সজাগ রয়েছেন ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের কর্মী ও আধিকারিকরাও। রাজ্যের বন বিভাগ সূত্রে যে খবর পাওয়া গিয়েছে, তা হল - জিনত এখনও পর্যন্ত বাংলার সীমানায় ঢোকেনি। তবে, সীমানার খুব কাছেই রয়েছে। কোনও অঘটন যাতে না ঘটে, তার জন্য বনকর্মী ও আধিকারিকরা রাত জেগে জঙ্গল পাহারা দিচ্ছেন।