মণিপুরে হিংসা থামার কোনও নাম নেই। সেখানে জাতিগত হিংসার আগুন জ্বলেই চলেছে। আর সেই আগুনে পুড়ে চলেছে উত্তরপূর্বের এই রাজ্য। হিংসায় মারা গিয়েছেন শতাধিক মানুষ। সম্প্রতি সেখানে তিন মহিলা এবং তিন শিশুর মৃতদের উদ্ধার ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। এই আবহে মণিপুর হিংসা নিয়ে মুখ খুললেন ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বাইচুং ভুটিয়া। গতকাল কলকাতায় কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন মন্ত্রকের এক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন এই কিংবদন্তী। সেখানেই মণিপুর ইস্যুতে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কলকাতার মাঠ কাঁপানো বাইচুং সেই সময় বলেন, 'মণিপুরে যা ঘটছে, তা খুবই দুঃখজনক। উত্তরপূর্ব ভারতের বাসিন্দা হিসাবে এটা আমাদের আঘাত করেছে। আমরা কেবল আশা করছি যে সব ঠিক হয়ে যাবে এবং শান্তির জন্য প্রার্থনা করে চলেছি। মণিপুর এত সুন্দর রাজ্য। পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে এখানে। আমি আশা করি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার সেখানকার সব সম্প্রদায়ের সাথেই একসাথে কাজ করবে এবং শান্তি ফিরিয়ে আনবে। কারণ এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।' (আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে হিন্দুদের ওপর হামলা, গর্জে উঠলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা)
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই মণিপুরে কুকি এবং মৈতৈ জনজাতির মধ্যে সংঘাত বজায় রয়েছে মণিপুরে। গত ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি অবস্থা। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে। এরই মধ্যে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। প্রসঙ্গত, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতৈ জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছিল যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধ জানিয়েছিল স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা। এদিকে হাই মণিপুর হাই কোর্টে এই নিয়ে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় হাই কোর্টের তরফ থেকে রায় দিয়ে জানানো হয়, মৈতৈদের নাম তফশিলি উপজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখুক রাজ্য। এই নির্দেশিকার পরই জো-কুকি সম্প্রদায়ের মানুষরা প্রতিবাদে নামেন। এই আবহে ২০২৩ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। পরে অবশ্য হাই কোর্ট সংরক্ষণ নিয়ে নিজেদের সেই পর্যবেক্ষণ ফিরিয়ে নেয়।
তবে এখনও হিংসা জারি আছে সেই রাজ্যে। এদিকে তফশিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছিল সেই রাজ্যে। এই আবহে গত ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসেই চূড়াচাঁদপুর জেলায় মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। এদিকে এই জেলা থেকে কুকি আদিবাসী বনাম মৈতৈদের এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলাতেও। আর এখনও পর্যন্ত সেই হিংসা প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকশো সাধারণ মানুষ। বাফার জোন করে মৈতৈ এবং কুকিদের ভিন্ন এলাকায় রাখা হয়েছে। তার মধ্যেও মাঝে মাঝেই বাঁধছে সংঘাত। একে অপরের দিকে আঙুল তুলছে দুই জনজাতি।